এক সমুদ্র প্রেম [পর্ব-০৭]

আমজাদ সিকদারের মে*জাজ তুঙ্গে। ক্রমে ক্রমে ফুঁ*সছে পুরু নাকের পাটা। দাঁত কি*ড়মিড়িয়ে দোল খাচ্ছেন কেদারায়। তন্মধ্যে ঘরে ঢুকলেন মিনা বেগম। সন্তপর্ণে দোর চা*পিয়ে নরম পায়ে এগিয়ে এলেন। স্বামীর রা*গত মুখচোখে দেখে অ*তিষ্ঠ ভঙ্গিতে দুদিকে মাথা দোলালেন। সুস্থে ধীরে ডাকলেন,

” শুনছেন!”

আমজাদ সিকদার তাকালেন না। একিরকম গাঁট হয়ে বসে রইলেন। মিনা বেগমের বুঝতে বাকী নেই,জল কতদূর গড়িয়েছে। যে বাড়িতে গাছের পাতা নড়েনা তার হুকুম ছাড়া,সেখানে মেয়ের শিক্ষক পরিবর্তন? তাও আবার যে ছেলেকে ঠিক করেছেন স্বয়ং তিনিই। মিনা বেগম অথৈ জলে পরলেন যেন। কী বলবেন,কী করবেন বুঝে উঠলেন না। ওদিকে ধেঁড়ি মেয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদ*ছে,আর এদিকে বাপ বো*ম হয়ে বসে আছে। সাথে বাড়িতে এসেছে ধূসরের বান্ধুবি। এই মুহুর্তে কোনদিক সামলালে জুতসই হবে কিছুতেই মাথায় ঢুকলোনা

। তখন আমজাদ সিকদার মেয়ের কা*ন্না শুনে ও ঘরে গেছিলেন। যখন শুনলেন আসল ঘটনা, টু শব্দ না করে হনহনিয়ে চলে এলেন কামড়ায়। মিনা বেগম ভালো করেই জানেন, বাড়িতে বাইরের লোক থাকাতেই আমজাদ সিকদার রা*গ -ঢাক গিলে ফেলেছেন। কিন্তু যেই মুহূর্তে মেয়েটি চলে যাবে? বো*ম ব্লাস্ট হবে তৎক্ষনাৎ। আর এই বি*স্ফোরনে কার কী কী ক্ষয় হবে না জানলেও ধূসরের যে বি*পদ আছে সে বিষয়ে সুনিশ্চিত।

তাইতো,সব কিছু ফেলে-ঝুলে স্বামীর পেছন পেছন এলেন। যাতে মে*জাজি মানুষটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটু শান্ত করা যায়। আর যাই হোক, মারিয়া মেয়েটা যে কী মার্জিত সে তার আচরনেই বোঝা যায়। এই মেয়ের কাছে পড়লে পিউ নির্দ্বিধায় ভালো রেজাল্ট করবে আশা আছে।

” সংয়ের মত দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

গুরুগম্ভীর স্বরটায় নড়েচড়ে উঠলেন মিনা বেগম। ধ্যান জ্ঞান ছুটে গেল। তটস্থ হয়ে তাকালেন স্বামীর দিকে। আমজাদ সিকদার তখনও চেয়ে আরেকদিক। মিনা বেগম নরম কন্ঠে বললেন,

” আপনি কি রা*গ করেছেন? “

” করার কথা নয় বলছো?”

পালটা প্রশ্নে মিনা বেগম ভ্রুঁ গুঁটিয়ে বললেন,

” রাগ করবেন কেন? ধূসর……”

পথিমধ্যেই খে*কিয়ে উঠলেন আমজাদ,

” চুপ করো! সারাক্ষন ধূসর ধূসর, ওর সাহস কী করে হয় আমার ঠিক করা ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিজে টিচার নিয়ে আসার?”

” এভাবে বলছেন কেন? পিউ কি ধূসরের পর কেউ? ওকি খা*রাপ চাইবে মেয়েটার? নির্ঘাত ফয়সালের পড়ানোর ধরন ওর ভালো লাগেনি বলে মানা করেছে। এমনি এমনি কোনও কাজ করার মত ছেলে আমাদের ধূসর নয়।”

আমজাদ সিকদার দাঁত চে*পে চোখ বুজে শ্বাস ফেলে তাকালেন। বললেন,

” যে ছেলে নিজের ভালোই বোঝেনা,সে কী করে আমার মেয়ের ভালো বুঝবে? এত টাকা পয়সা খরচা করে বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছিলাম,আশা করলাম ফিরে এসে শ*ক্ত হাতে ব্যবসা সামলাবে। কিন্তু না,সে ব্যস্ত অন্য নেতাদের পেছনে চামচামি করতে। বেকার বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ না কী আবার এমনি এমনি কোনও কাজ করেনা।”

ধূসরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলায় মিনা বেগমের মুখ চুপসে এলো। সাফাই গেয়ে বললেন,

” এভাবে বলছেন কেন? ধূসর বেকার কে বলেছে? রাজনীতি কি পেশা নয়? ওতো আপনাদের টাকায় এক জোড়া জুতোও কেনেনা। তাহলে কথায় কথায় ছেলেটাকে এত হেয় করে কথা বলেন কেন?”

আমজাদ সিকদার চোখমুখ কুঁচকে বললেন,

” রুবাইদার থেকেও এই ছেলের প্রতি দেখছি তোমার বেশি টান। ওকে কিছু বললেই কোমড় বে*ধে ঝ*গড়া করতে আসো।

” ছেলে কি রুবাইদার একার? এবাড়ির প্রত্যেকটা সন্তান আমাদের প্রত্যেকের। এসব তো আপনি নিজেই আমাকে শিখিয়েছিলেন। আর আপনি নিজেও কি ধূসরকে কম ভালো বাসেন? ছেলেটা এখন আপনার কথার বিরোধিতা করে, মন মতো কাজ-বাজ করেনা বলেই আপনার এত হ*ম্বিতম্বি। নাহলে এরকমটা আপনিও করতেন না আমি ভালোই জানি। আচ্ছা,সব বাদ,একটা কথাতো অস্বীকার করতে পারবেন না।ধূসরের মত রেজাল্ট আমাদের এই তল্লাটে কজনের আছে বলুন তো? পড়াশুনায় ওর মত দূর্দান্ত মাথার ব্রেইনই বা আছে কার? তাই এসব ক্ষেত্রে আপনার, আমার থেকে, ও বেশি ভালো বুঝবে তাইনা?”

যুক্তিটা মানানসই । ভেতর ভেতর আমজাদ সিকদার নিজেও জানেন ধূসরের পড়াশুনার এই গুনের কথা। সাথে ছেলে মাত্রাধিক বুদ্ধিধারি। অফিসের লোকজনের সঙ্গে, বন্ধুবান্ধবের সাথে একসময় নিজেও গুনগান গেয়েছেন এই ছেলেকে নিয়ে। আর এখন? দুঃ*খটা সেখানেই। সুক্ষ্ণ হাসলেন তিনি। আফসোস করে বললেন,

” কী লাভ হলো এত ভালো ব্রেইন দিয়ে? না পারল একটা ডাক্তার হতে,না পারল ইঞ্জিনিয়ার, অপাত্রে দান সব।”

মিনা বেগম এতক্ষন কোমল স্বরে কথা বললেও এবার খেই হারালেন। ক*ঠিন কিছু জ্বিভের ডগায় এলেও বলতে পারলেন না। স্বামীর মুখের ওপর ক*ড়া জবাব দেয়ার অভদ্রতা হবেনা তাকে দিয়ে। তাই মিনমিন করে বললেন

” সবাইকে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এরকম কোনও কথা নেই। ধূসরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। ও ঠিক একদিন অনেক বড় নেতা হবে। সেদিন আপনিও ওর কাজে বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলবেন ” ও আমাদের বাড়ির ছেলে। আমার বংশের গৌরব।”

আমজাদ সিকদার বিদ্রুপাত্মক হেসে উড়িয়ে দিলেন কথাটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুপাশে মাথা নেড়ে বললেন,

” তাহলে তো হয়েই যেত!”

” হবে,একদিন না একদিন আমার কথাটা ফলবে ইনশাআল্লাহ। তাই আপনার কাছে এখন অনুরোধ করছি এ বিষয় নিয়ে আর কোনও ঝামেলা নাই বা করলেন। পিউ এর এতেই ভালো হবে দেখবেন। ভীষণ ভালো রেজাল্ট করবে ও। মিলিয়ে নিন।”

স্ত্রীর আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক না হয়ে পারলেন না আমজাদ। কী পরিমান ভরসা থাকলে মানুষ এরকম আজগুবি কথাবার্তা বলে! নতুন করে বি*তর্ক করতে ইচ্ছেও করলনা তার। একটা কথা ঠিক, পিউয়ের জন্যে ধূসরের কোনও সিদ্ধান্ত কখনোই খারাপ হবেনা এ বিশ্বাস তার নিজেরও আছে। যার দরুন ধূসর পিউকে শাসন করলে, তিনি ভাণ করেন দেখেও না দেখার। কিন্তু যে ছেলে তাদের কাউকে মানেনা সে ছেলের বাকীদের বেলায় কেন এত ক*ঠোরতা থাকবে? এটা কী মেনে নেয়ার মত কথা? আবার, ধূসরকে কিছু বলা মানে এ বাড়ির নারী সদস্যরা হাম*লে পরা এক প্রকার। আমজাদ সিকদার ভাবুক ভঙিতে চুপ করে বসে থাকলেন। পরিস্থিতি অনুকূলে বুঝতে পেরে ঠোঁটে হাসি ফুটল মিনা বেগমের। গদগদ হয়ে শুধালেন,

” আপনাকে এক কাপ চা বানিয়ে দেই?”

আমজাদ সিকদার উত্তর দিলেন না। মিনা বেগম ফের বললেন

” মাথা টা কী এখনও গ*রম? লেবুর শরবত দেব না কি এক গ্লাস?”

আমজাদ সিকদার রে*গেমেগে বললেন

” খুচরো আলাপ বাদ দিয়ে আপাতত আমার চোখের সামনে থেকে বিদেয় হও। “

মিনা বেগম থতমত খেলেন স্বামীর অকষাৎ চেঁ*তে যাওয়ায়। ” যাচ্ছি,যাচ্ছি ” বলেই দ্রুত পায়ে ঘর ছাড়লেন। আমজাদ সিকদারের মে*জাজ ঠিক হলোনা,হবেওনা। বিষয়টা বুঝতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। ওয়াড্রবের ড্রয়ার থেকে শার্ট বের করে ফতুয়ার ওপরেই পরে ফেললেন। এখন বাড়িতেও থাকবেন না। ভাবভঙ্গি ঠিক করতে হলে হাওয়া বাতাস খেয়ে আসতে হবে বাইরের।

______

পিউ,নামের মতই ছোটখাটো শ*ক্তির অধিকারি মেয়েটির দূ*র্দশা কমার নয়। উলটে হৈহৈ করে বাড়ছে। তখন দরজার ছিটকিনি টানার আগেই ভূতের মতন হাজির হলো ধূসর। এক হাত দিয়ে ঠেকিয়ে ধরল দরজাটা। পিউ ঘাব*ড়ে গেলেও হাল ছাড়লনা। পালটা জো*র খাটাল সে। দরজা আজ লাগিয়েই ছাড়বে। কোনও ভাবে দরজা আটকাতে না পারলে আজ আর র*ক্ষে নেই। কিন্তু দূর্ভাগ্য! ধূসরের মত বলিষ্ঠ পুরুষের গায়ের জো*রের নিকট মেয়েটা যে দুগ্ধপোষ্য শিশু! ধূসরের পেছন থেকে পুষ্প,আর পিউয়ের পেছনে রুবায়দা বেগম,দুজন বোকার মতন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন ওদের কান্ড। শেষমেষ ল*ড়াইয়ে পরা*জয় নিশ্চিত, বুঝতে পেরেই দ*মে গেল পিউ। দরজা ছেড়ে দিয়ে এক লাফে গিয়েই লুকালো রুবায়দা বেগমের পেছনে। ভী*ত আ*র্তনাদ করে ব্ললল,

” ও মেজো মা আমাকে বাঁচাও।”

রুবায়দা বেগম আশ্বস্ত করলেন ” কিছু হবেনা। আমি আছিতো।”

কাজ হলোনা তাতে। পিউ অস্থির হয়ে বলল,

” নায়ায়া আমাকে মা*রবে তোমার ছেলে।”

ধূসর ঘরের ভেতর পা রাখতেই পিউ আ*তঙ্কে চিৎকা*র ছুড়ল। পুনরায় বাচ্চাদের মত কেঁ*দে উঠল। রুবায়দা বেগম ওকে আড়াল করে বললেন,

” ধূসর কিছু বলবিনা ওকে।”

ধূসরের কানে কথাটা পৌঁছালো কী না বোঝা গেলনা। সে আগুন চোখে চেয়ে রইল পিউয়ের দিকে। মেয়েটার রু*হু শুকিয়ে গেল এতেই। ধূসর গম্ভীর কন্ঠে হুকুম ছুড়ল,

” সামনে আয়।”

পিউ আরো জোরেশোরে আগলে ধরল রুবায়দা বেগমকে।

” ও মেজো মা, মেজো মা আমাকে বাঁচাও,আমি শে*ষ। “

রুবায়দা বেগম চোখ রা*ঙালেন ছেলেকে

” ধূসর! কী হচ্ছে টা কী? ভ*য় পাচ্ছে তো মেয়েটা। বারন করছি না তোকে।”

ধূসরের শ*ক্তপোক্ত চিবুক ম*টমট করে উঠল।

” এখন ভয় পাচ্ছে কেন? এরকম করার আগে মাথায় থাকেনা ? মারিয়া কী মনে করবে একবারও ভেবেছে? কী চাইছে ও? আমার সন্মানটা মাটিতে মেশাতে? মা তুমি সরো,আমাকে বুঝে নিতে দাও। ও কেন এরকম করল বলতে হবে আমাকে। এক্ষুনি তুই সামনে আসবি পিউ,খুব খা*রাপ হবে নাহলে।”

পিউয়ের হাত পা থরথর করে কাঁ*পছে। একপ্রকার আষ্ঠেপৃষ্ঠে খাঁ*মচে ধরেছে মেজো মাকে। রুবায়দা বেগম হাজার বলে কয়েও ছেলেকে বোঝাতে পারলেন না। ধূসরের টকটকে মুখমন্ডল দেখেই বোঝা যাচ্ছে কী মারাত্মক রে*গে গেছে। কিন্তু ওকে খবরটা দিলো কে?

পিউ কিছুতেই চোখ তুললনা। সে পায়ের পাতার দিক চ ভী*তশশস্ত্র চেয়ে কাঁ*দায় ব্যস্ত। সকালে কার মুখ দেখে উঠেছিল আজ? এতটা খা*রাপ তো কোনও দিন যায়না।

ধূসর হু*ঙ্কার দিল ” সামনে আসবি না?”

পিউ কেঁ*পে ওঠে। আরো দৃঢ় করে আগলে ধরে রুবায়দা বেগমকে। ভদ্রমহিলা সাংঘাতিক বি*পাকে পরলেন যেন। দুজনের কোনটাকে সামলাবেন বুঝে পেলেন না। মেয়েটাকে বাঁচাতে বাপ/চাচা কাউকে ডাকবেন তাও হবেনা, বি*শ্রী রকমের ঝা*মেলা হবে তবে। শেষমেষ উপায় না দেখে রুবায়দা বেগম বললেন,

” থাক রে ধূসর,পিউ মারিয়ার কাছেই পড়বে। এমন আর কখনও করবেনা। রাগ ক*রিস না থাক।”

পিউ কা*ন্না থামিয়ে ভ্রুঁ কোঁচকাল। বলতে চাইল ” কিছুতেই আমি ওই মেয়ের কাছে পড়বনা।”

পরপর ধূসরের লালিত চোখ দেখে আঁটশাট হয়ে ঢোক গিলল। ধূসর পুরু কণ্ঠে বলল।

” কথাটা ওর মুখ থেকে বলতে বলো।”

রুবায়দা বেগম পিউয়ের দিকে ঘাড় কাত করে তাকালেন৷ মোলায়েম কন্ঠে বললেন,

” বল মা,তুই মারিয়ার কাছে পড়বিনা? বল..। “

সাথে চোখ দিয়ে হ্যাঁ বলতে ইশারা করলেন তিনি। মনের মধ্যে সকল বিরোধিতা চাপা দিয়ে ধূসরের ভ*য়ে ওপরে নিচে মাথা দোলাল পিউ। পড়বে সে। রুবায়দা বেগম সঙ্গে সঙ্গে প্রসস্থ হেসে বললেন,

” দেখলি,মেয়েটা কত লক্ষী!”

ধূসরের ক্রো*ধিত মুখস্রী ক্ষান্ত হলো খানিক। গম্ভীর কন্ঠে তর্জন দিলো ,

” এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বস,আমি মারিয়াকে পাঠাচ্ছি। নতুন কোনও নাটক করলে….”

” না না ও কিচ্ছু করবেনা, তুই যা বাবা,যা…”

ধূসর তীর্যক দৃষ্টিতে আড়চোখে একবার দেখে নিলো পিউকে। শব্দযুক্ত কদমে ঘর ছাড়ল এরপর। পিউয়ের নিঁচের অধর উল্টেপাল্টে উঠে এলো চূড়ায়। ক*ষ্টে,রা*গে,দুঃ*খে মন চাইল বারান্দা থেকে ঝাঁ*প দিতে। ধূসর ভাই ওই মেয়ের জন্যে এতকিছু বলে গেল,রা*গ দেখাল। এতটা গুরুত্ব তো আমাকেও দেননা উনি। পিউ ঝরঝর করে কাঁদবে,এর আগেই রুবায়দা বেগম গাল ধরে বললেন,

” ইশ! কী অবস্থা চেহারার। যা মা,চোখেমুখে একটু পানি দিয়ে আয়। খিদে পেয়েছে? খাবি কিছু?”

পিউ দুপাশে মাথা নাড়ল। নাক টে*নে বেসিনের দিকে হাঁটা ধরল।

পুষ্প খাম্বার মত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এতক্ষন নীরব দর্শক বনে দেখেছে সব। পিউ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় দুঃ*খী কন্ঠে বলল

” কেন যে শুধু শুধু কান্নাকাটি করতে গেলি! ধূসর ভাইয়া আসতেই তো হাওয়া বেরিয়ে গেল সব।

পিউ ছ্যাঁত করে উঠে বলল,

” তুই যে আজকাল কোথায় কোথায় উঁকি মারছিস আব্বুকে গিয়ে বলব?”

তৎক্ষনাৎ মেয়েটার চিমসে যায়। পিউ আর কিছু বললনা। তবে মনে মনে জোড়াল প্রতিজ্ঞা করল,

“এখন যত কাঁ*দাচ্ছেন ধূসর ভাই,সব কড়ায় গন্ডায় শোধ করব একদিন।”

পিউ ঠিকঠাক হয়ে টেবিলে বসার পরেই মারিয়া পড়াতে এলো। মিনা বেগমের ঠোঁটে সেই ক্ষনে বিজয়ের চা*পা হাসি ফুটল। গর্বিত হলেন। তার ঘাড়ত্যারা মেয়েকে ঠিক করতে ধূসরের জুড়ি নেই। কিন্তু কথা হলো ওকে ডাকল কে? প্রত্যেকের এই এক প্রশ্ন। অথচ জবাব পাওয়া গেল না। পিউয়ের কা*ন্না বন্ধ হলেও হেচকি চলছে,নাক টানছে।

মারিয়া সহজ স্বাভাবিক ভাবে পড়াতে শুরু করল। হাবভাব দেখে বোঝার উপায় নেই বাড়িতে ঢোকার পরপর কী ল*ঙ্কা কান্ড ঘটেছে!

মারিয়া জিজ্ঞেস করল ” আজ তো প্রথম দিন, কী পড়বে পিউ? “

পিউ থমথমে কন্ঠে জবাব দিল ” আপনার যা মন চায় পড়ান।”

” না তোমার একটা….. “

কথার মধ্যেই প্রবেশ করল ধূসর। সোজা মারিয়াকে শুহাল,

” কোনও স*মস্যা হচ্ছে মারিয়া?”

আওয়াজ শুনেও পিউ পেছন ঘুরে তাকালো না। মারিয়ার পেছনে থাকা থাই গ্লাসের দিক তী*ক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইল। ধূসরের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট সেখানে। মারিয়া মৃদূ হেসে বলল,

” না না, সমস্যা হচ্ছেনা। বরং তোমার বাড়ির লোকের এত অমায়িক, আমারতো ভালোই লাগছে।”

পিউ দাঁত কপাটি চে*পে ধরল। মেয়েটি তার ধূসর ভাইকে তুমি তুমি করছে কেন? ধূসর অমত্ত জবাব দিলো,

” বেশ! কোনও কিছু প্রয়োজন হলে বড় মাকে বলবে। সংকোচ করবেনা। আমি আসি।”

পিউয়ের মেজাজ খা*রাপ মাত্রা ছাড়াল। কলমের নিপটা শক্ত হাতে চে*পে ধরল খাতার সাদা পৃষ্ঠায়। খুব তাড়াতাড়ি এই মারিয়াকে তাড়াতে হবে,নাহলে ভালো মন্দ বলা যায়না। দেখা গেল এই মেয়েই তার জীবনের সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হলো! রিস্ক তো নেয়া যাবেনা।

___

মিটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল যখন,তার থেকেও এক ঘন্টা পার হয়েছে। অথচ এখনও পার্লামেন্টে হাজির হয়নি ধূসর। ইকবাল বারবার হাতঘড়ি দেখছে। দুহাতে কোমড়ে ঠেকিয়ে উদগ্রীব হয়ে তাকাচ্ছে গেটের দিক। কিন্তু তবুও বির*ক্তির ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছেনা চেহারায়৷ এই যে এতক্ষন ধরে ধূসর আসেনি,এটাই যেন স্বাভাবিক। তবে বাকীরা অধৈর্য হয়ে পরেছে। বসে বসে ঝিমোচ্ছে কেউ কেউ। এতটা সময় বসতে বসতেও পিঠ ধরে গেছে অনেকের। কিন্তু টু শব্দ করা চলবেনা। ইকবালের ঘোষণা যখন,ধূসর না এলে মিটিং শুরু হবেনা। তখন হবেওনা। আর সভাপতির মুখের ওপর কথা বলার জন্য যে টুকু বক্ষ পিট প্রয়োজন,তা ওদের নেই। ইকবালদের গ্রুপের আরো একজন হলো সোহেল। একিসাথে পড়াশুনা করেছে সেও। এই এক ঘন্টায় এ অবধি চারটে সিগারেট টেনেছে। এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটেছে। হাত নিশপিশ করছিল ধূসরকে ফোন করতে,অথচ ইকবালের ক*ড়া নির্দেশ ফোন করা চলবেনা। ধূসর কী না কী গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। সেখানে ডিস্টার্ব করলেই কা*টা যাবে গর্দান। সোহেল বড় করে হাই তুলল। ঘুম পাচ্ছে এখন। আর ধৈর্য রাখতে না পেরে শেষে উঠে এলো ইকবালের নিকট। ছেলেটা এখনও ওভাবে দাঁড়িয়ে। সোহেল কপাল গুছিয়ে বলল,

” হ্যাঁ রে ভাই আর কতক্ষন লাগবে ওর? ফোন করনা এবার।”

ইকবাল তাকালোনা। গেটের পানে চোখ রেখেই উত্তর দিল,

” না। চলে আসবে।”

সোহেল চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,

” বুঝলাম না,তোর মিটিং শুরু করতে ধূসরকেই কেন লাগবে? তুই হলি এখানকার সভাপতি, আর ধূসর সহ সভাপতি। ওর থেকে তোর বেশি ক্ষ*মতা। তুই শুরু করলেই তো হয় তাইনা?”

ইকবাল ফিরল ওর দিকে। মুচকি হেসে বলল,

” ধূসর তোকে ঠিক নামেই ডাকে। তুই আসলেই ছাগল।”

সোহেলের উদ্বীগ্ন মুখচোখ শিথিল হলো। কালো হয়ে এলো সাথে সাথে। মন খা*রাপ করে বলল,

” আজ পেটের মধ্যে ইয়ারফোনের প্যাচ নেই বলে এভাবে বললি? এই তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু?”

ইকবাল আবার হাসল। সোহেলের কাঁধ পেঁ*চিয়ে বলল,

” গাঁধা। মজাও বুঝিস না। শোন, আজ তোকে একটা সহজ কথা বুঝিয়ে দেই। সেটা হলো, ধূসরের একার মাথায় যা বুদ্ধি,তা তোর আর আমার দুটো মাথা এক জায়গায় করলেও হবেনা। বুঝলি?”

সোহেল বোঁকা বোঁকা চাউনীতে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। বোঝেনি। ইকবাল বলল,

” জানতাম তুই বুঝবিনা। আচ্ছা দ্যাখ,এ অবধি যত্ত মিটিং, আলোচনা আমরা করেছি,তাতে সব থেকে বেশি কথা বলে কে?”

” ধূসর।”

” আমরা যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিই,সবার আগে সেটা উপস্থাপন করে কে?”

” ধূসর।”

” যে কোনও ঝুটঝা*মেলা মেটাতে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পরে কে?”

সোহেল এবারেও মাথা দুলিয়ে বলল ” ধূসর।”

” তাহলে সবথেকে বেশি কৃতিত্ব কার?”

” ধূসরের।”

ইকবাল ওর কাঁধ চাঁ*পড়ে বলল ” সাবাশ! বুদ্ধি খুলেছে। তোকে একটা সিক্রেট বলি শোন,

এরপর ইকবাল ফিসফিস করে বলল,

” আমি নামেই সভাপতি, আর ধূসরও নামেই সহ সভাপতি। বুঝেছিস?”

সোহেল মাথা চুল্কে বলল ” না।”

” আহাম্মক।”

এর মধ্যেই ধূসরের বাইকের শব্দ পেল ইকবাল। সোহেল কে রেখেই এগিয়ে গেল ওর দিকে। ধূসর বাইক স্ট্যান্ড করেছে কেবল। ইকবাল গিয়েই বলল,

” কীরে শালা,মিটলো তোর কাজ?”

ধূসর ছোট করে জবাব দেয়,

” হু।”

পরপর চোখ সরু করে বলল ” তোর শালা আমি ?”

ইকবাল লজ্জ্বা পেয়ে ঘাড় চুল্কাল। প্রসঙ্গ এড়াতে বলল,

” তা তোর ক্লান্ত লাগছেনা? এই বয়সে বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা সামলাচ্ছিস যে!”

ধূসর একদম স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

” জানতাম এরকম কিছুই ঘটবে,প্রস্তুত ছিলাম। “

ইকবাল বড় করে শ্বাস টে*নে বলল,

” বুঝলাম, এসব তোর দ্বারাই সম্ভব। আচ্ছা চল এবার। অনেক সময় গেছে, আসল কাজ শুরু করি।”

____

রাত আটটা বাজে। পুষ্পর বিছানায় তদন্ত কমিটি বসেছে। সুমনা বেগম,পুষ্প আর পিউ অংশ নিয়েছে সেখানে। সম্পর্কে সুমনা বেগম ওদের চাচী হলেও মেশেন ঠিক বন্ধুর মতন। আপাতত তিনজনের একটাই প্রশ্ন, ” ধূসরকে খবরটা দিলো কে?”

পিউ ভেবেছিল পুষ্প আনিয়েছে ধূসরকে। সেজন্যেইতো তখন চো*টপাট দেখাল ওরকম। পরে জানল পুষ্প কিছুই জানেনা এসবের। একে একে বাড়ির প্রত্যেককে সে জিজ্ঞেস করেছে ঘর শ*ত্রু বিভীষনের কাজটা কে করল। ধূসর ওই সময় না এলে মারিয়ার কাছে জোরপূর্বক পড়তে হতোনা তার। উলটে ওর কা*ন্নাকাটি দেখে বাবা ঠিক পাঠিয়ে দিতেন মেয়েটিকে। ধ্যাত! সব মাটি।

শলা-পরামর্শ করেও কোনও উত্তর পাওয়া গেলনা যখন সবাই হা*র মেনে বসে রইল। খনকাল নিরবতা চলল তিনজনের। হঠাৎ পুষ্প শুধাল,

” আচ্ছা,মারিয়া আপু কেমন পড়ান?”

পিউয়ের অভিব্যক্তি মুহুর্তে পাল্টাল। যেন শুনল তার জাতশ*ত্রুর নাম। ইচ্ছে হলো বলবে,

” বি*শ্রী পড়ায়,বা*জে পড়ায়,এত খা*রাপ কেউ পড়ায়না “।

পরে ভাবল মিথ্যে বলে লাভ নেই। হাস্যহীন জবাব দিল,

” একদিন পড়ে বুঝিনি। অপেক্ষা কর, দুদিন পর জানাব।”

পুষ্প মিটিমিটি হেসে বলল,

” ধূসর ভাই আজ যা দিলোনা পিউকে ছোট মা, ওনাকে দেখেই ওর হাত পা এরকম কা*পছিল দেখো…”

পিউয়ের কাঁ*পা-কাঁ*পি কে অনুকরন করে দেখাল পুষ্প। সুমনা বেগম ও হেসে উঠলেন। পিউ চেঁ*তে বলল

” ওনাকে দেখলে তুই বোধ হয় কাঁ*পিস না? সেদিন যখন ধূসর ভাই তোকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখেছিলেন, মনে আছে? ভ*য়ে দরজা আটকে বসেছিলি।”

পুষ্পর কথা বন্ধ হয়ে গেল। হাসিহাসি মুখটাও দপ করে নিভে গেল। মিনমিন করে বলল,

” ওটাত এম….”

পিউ পথিমধ্যেই বলল ” থাক থাক,এমনি না কী আমার জানা আছে।”

সুমনা বেগম বললেন, ” আহ! তোরা ঝ*গড়া করছিস কেন? আর ও পিউ তুইই বা মুখটা এমন হাড়ির মত করে রেখেছিস কেন? হাস একটু! চল লুডু খেলি আমরা।”

পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ” না গো ছোট মা,ভাল্লাগছেনা আমার। যতক্ষন অবধি না জানব ধূসর ভাইকে কে ফোন করল ততক্ষন অবধি শান্তি নেই।”

অথচ মনে মনে বলল

” যতক্ষন অবধি ওই মারি পেত্নীকে কে না তা*ড়াব ততক্ষন অবধি ঘুম ও হবে না আমার।”

হঠাৎই দরজায় দাঁড়ানো রাদিফ হৈহৈ করে বলল,

” বড় ভাইয়াকে তো ফোন আমি করেছি পিউপু।”

সকলে চকিতে তাকাল ওর দিকে। পুষ্প অবাক হয়ে বলল,

” তুই? কেন?”

রাদিফ তার হাফ জিন্স প্যান্টের পকেটে হাত ভরে দুপা এগিয়ে গেল। ভীষণ ভাব নিয়ে বলল,

” কেন আবার,পিউপু কে ব*কা খাওয়াতে। ওমন কিউট আপুটাকে দেখে পিউপু যেভাবে কা*ন্নাকা*টি লাগাল,আমার ভারি খা*রাপ লেগেছে। ওইজন্যেই না আম্মুর ফোন থেকে ভাইয়াকে কল টা করেছি। “

প্রত্যেকে হা করে রাদিফের মুখের দিক তাকিয়ে রইল। পিউ কাঁ*দোকাঁ*দো কন্ঠে বলল,

” তুই আমার ভাই না দুশ*মন? বাইরের মেয়েটার জন্যে আমাকে ব*কা খাওয়াতে এত ইচ্ছা জাগল তোর?”

রাদিফ দাঁত বার করে হেসে বলল,

” স্যরি পিউপু,কিছু মনে কোরোনা। ভাইয়াকে না জানালে বড় চাচ্চু মারি আপুকে পাঠিয়ে দিতেন। আমি কিছুতেই তা হতে দিতে পারিনা। ওনার চুল গুলো দেখছো তোমরা? কী সুন্দর আর লম্বা। আর তোমরা কি করো,কে*টেকু*টে সব ছোট করে রাখো। ছাগলের দাড়ির মতন। ভালো লাগেনা।”

তীব্র অনিহা প্রকাশ করল রাদিফ। পিউ নাক ফুলিয়ে বলল ” তবে রে দাঁড়া!”

বিপদসংকেত পেতেই দৌড় লাগাল রাদিফ। পেছনে ছুটল পিউ। আজ এই পিচ্চির বারোটা বাজাবে ।

” দাঁড়া বলছি, দাঁড়া রাদিফ।”

রাদিফ ছুটতে ছুটতে বলল ” পাগল না কী,আমি দাঁড়াই আর তুমি আমাকে ইচ্ছেমতো ক্যা*লানি দাও।”

দেখতে দেখতে রাদিফ সিড়ি বেঁয়ে নেমে গেল৷ পিউ ও একিরকম ছুটছে পেছনে। জবা বেগম টেবিল মুছতে মুছতে সাব*ধানী বানি দিলেন,

” আহা আস্তে পরে যাবি।”

রাদিফ খিলখিল করে হেসে দাঁড়িয়ে পরল সদর দরজার সামনে । মাথা নেড়ে নেড়ে বলল ” এসো,ধরবে এসো।”

পিউ ধরতে এগোতেই রাদিফ সরে গেল,ঠিক সেই সময় হাজির হলো সাদিফ। অফিস থেকে ফিরেছে সে। ওমনি সং*ঘর্ষ হল সাদিফের বুকের সঙ্গে। ধা*ক্কার টাল সামলাতে না পেরে দু ফুটের পিউ ছি*টকে পরল মেঝেতে। সাদিফ পরতে পরতেও দেয়াল ধরে সামলালো নিজেকে। তবে চোখের চশমাখানা নি*স্তার পেল না। বেচারা খ*সে পরে টুক*রো টুক*রো হয়ে ভে*ঙে গেল। দৃশ্যটায় দারুন মজা পেল রাদিফ। হাত তালি দিয়ে হেসে উঠল সে। পিউ ব্য*থা পেল কোমড়ে। কিন্তু সাদিফের মে*জাজ চড়ে বসল। ভা*ঙাচোরা চশমার খন্ডর দিক কিছুখন থম ধরে চেয়ে থাকল। পরপর তুলে নিল হাতে। পিউ কোনও রকম উঠে দাঁড়াল মাত্র। কোন খেয়ালে রাদিফ কে ধরতে গিয়ে সাদিফের সঙ্গে বা*রি লেগেছে। এতে তার দোষ নেই যদিও,তবুও ভীষণ দুঃ*খিত হয়ে বলতে গেল,

” স্যরি ভাইয়া আমি ____

প্রথমবারের মত ধ*মকে উঠল সাদিফ। রে*গে আ*গুন হয়ে বলল,

” এক চ*ড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেব তোর! চোখে দেখিস না? দিলি তো আমার প্রিয় চশমাটাকে ভে*ঙে।

পিউ কেঁ*পে উঠল, ভ*য় পেল। ভাইয়ের রা*গান্বিত অবস্থা দেখে হাসি মুছে গেছে রাদিফের। কে*টে পরল সে। সাদিফের থেকে কোনও দিন একটা ব*কাও না শোনা পিউয়ের বুকটা ভারী হয়ে এলো। কোটরে জল জমল। উচু কন্ঠ কানে যেতেই ছুটে এলেন জবা বেগম। উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,

” কী হয়েছে? “

” কী হয়েছে? কী হয়েছে ওকে জিজ্ঞেস করো। পিউ তোর বয়স কত রে,সারাদিন ছোটাছুটি করছিস। পড়তে বসতে পারিস না? এক জায়গায় শান্ত হয়ে বসে থাকলে কী জাত যাবে তোর? বয়স যত বাড়ছে বুদ্ধি তত কমছে। বাড়ছে ছেলেমানুষী। “

পিউ মাথা নিচু করে ফেলল। চোখ থেকে দুফোটা জল গড়াল গালে। জবা বেগম ওকে আগলে ধরে বললেন,

” এভাবে বলছিস কেন? একটা চশমার জন্যে এত কথা শোনানোর কি আছে? কিনে নিতে পারবিনা?”

সাদিফ নাকমুখ ফুলিয়ে বলল ” যা বোঝোনা সে নিয়ে কথা বলোনা মা। তোমাদের আশকারাতেই ও এরকম হচ্ছে। ধুর! মুডটাই বি*গড়ে দিল।”

সাদিফ গটগট পায়ে ঘরে চলে গেল। পিউ অনুতাপ করে ভেজা গলায় বলল,

‘ বিশ্বাস করো সেজো মা, আমি ইচ্ছে করে করিনি।’

জবা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” জানিতো আমি মা ,তুই ওর কথা ছাড়তো। “

পিউ ফের কিছু বলতে গেলেই চোখ পরল চৌকাঠে। ধূসর দাঁড়িয়ে। ছোট খাটো অক্ষিযুগল তার দিকেই চেয়ে। পিউয়ের আর কিচ্ছু বলার ইচ্ছে করলনা। চোখ মুছে ঘরে গেল সেও।

জবা বেগম লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে দুদিকে মাথা নেড়ে সেও ফিরে গেলেন কাজে। ধূসরকে লক্ষ্য করেননি। ধূসর বাড়িতে পা রাখল, কোথাও না থেমে সোজা চলে গেল সাদিফের ঘরের দিকে।

সাদিফ শার্টের দুটো বোতাম খুলেছে কেবল। এর মধ্যেই দরজায় টোকা শুনে ফের লাগাল। দরজা টানতেই ওপাশে ধূসরকে দেখে অবাক হলো খানিক। সচরাচর তার রুমে আসেনা সে। তেঁ*তে থাকা মে*জাজেও হাসার চেষ্টা করে বলল,

” ভাইয়া তুমি? ভেতরে এসো।”

ধূসর ঢুকলোনা। ওভাবে দাঁড়িয়েই গুমোট স্বরে, সোজাসাপটা প্রশ্ন করল,,

” চশমার দাম কত তোর? কোন ব্রান্ড থেকে কিনেছিস?”

চলবে,…

  • নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top