কোচিং থেকে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল চৈতি,তারই মধ্যে এত খারাপ একটা স্বপ্ন দেখবে ভাবেনি তাও আবার হিমেল ভাই কে নিয়ে।
কথা গুলো ভাবতেই ঘেমে একাকার অবস্থা হচ্ছে চৈতির,ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে লাগল চৈতি।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে সিফাত, ফিমেল, মাহমুদ,নিহা আর তানিয়া। ওদিকে বড়রা সবাই খাওয়ার ব্যবস্থা করছে,চৈতি কে দেখে দৌড়ে যায় রিতু।রিতু কে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে চৈতি, তানিয়া ইশারা করে চৈতিকে নিজের পাশে বসতে বলে। সামনের মানুষ কে দেখে একটু নড়ে চড়ে বসে চৈতি,ওর সই সই বসে আছে হিমেল। দৃষ্টি একদম তার দিকে চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নেয় সে, কিন্তু হিমেল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার চড়ুই পাখির দিকে।
কেমন জানি দম ব’ন্ধ হয়ে আসছে চৈতির , না আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা যাবে না।জায়গা ছেড়ে উঠে পরে চৈতি,পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে। কিন্তু তার আগেই আসিফা মেয়ের হাত ধরে বলে।
‘ কোথায় যাচ্ছিস তুই?আয় বস এখানে।’
আসিফা রহমান আবারও নিজের জায়গা বসে পড়ে চৈতি, ভেতরে ভেতরে হাঁসফাঁ’স করছে সে।ওর এমন অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে হিমেল।তারই মধ্যে মাহমুদ ফিস ফিস করে বলে ।
‘ কী রে ভাই তোর চড়ুই পাখি এত হাঁসফাঁ’স করছে ক্যা।’
‘ চড়ুই পাখি উড়তে চাইছে,তাই তো এত টানা ঝাপটাচ্ছে।’
‘ ওহ্,গুড গুড চালিয়ে যা। দেখি এবার আমার কী হয়।’
শপিং এ গেছে তানিয়া,নিহা আরিফ,নিশা কলেজে আছে।আসিফা রহমান আর শান্তা ওরা রুম্পার বাড়িতে গিয়েছে , তানিয়া অনেক বার চৈতি কে বলেছে ওদের সাথে আসার জন্য কিন্তু ও যায়নি। সে চায় আরিফের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার,মেয়ে কে একা রেখে যেতে চাইছে না আসিফা শেষমেশ বলল ফুপির বাড়িতে আয় কিন্তু তাতেও রাজী না চৈতি।কাল রাতে যা স্বপ্ন দেখেছে তার পর ওই বাড়িতে হিমেলের মুখমুখি হওয়া এক প্রকার অসম্ভব ওর পক্ষে। অবশেষে রিতু কে নিয়ে বাড়িতেই রয়ে গেল সে।রিতু আর চৈতি বিছানায় শুয়ে আছে,মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে,চৈতিরও চোখ লেগে আসছে তারই মধ্যে বাড়ির বেল বেজে উঠল।শুয়া থেকে উঠি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পায় হিমেল প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। হিমেল কে দেখে চৈতির মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল।
‘ হিমেল ভাই আপনি এখানে?’
ভ্রুকুটি করে তাকায় হিমেল,বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে আবারও দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে চৈতির দিকে দিয়ে বলে।
‘কেন আমি আসতে পারি না?’
‘না না এটা কে বললো? আপনি তো মা আর চাচী কে কে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে গেলেন তাহলে আবার ফিরে আসলেন তাই অবাক হচ্ছি।’
‘ ওখানে এত এত মহিলার মাঝখানে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই চলে আসছি, আচ্ছা শুন তুই গিয়ে আমার জন্য কড়া করে এক কাপ কফি নিয়ে আয়। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে।’
‘ আচ্ছা ভাই আপনি বসেন আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
চৈতি বড় বড় পা ফেলে রান্না ঘরে চলে গেল, ভীষণ রাগ হচ্ছে তার যে মানুষের জন্য ফুপির বাড়িতে ভয়ে যায়নি সেই এখান তার বাড়িতে তার সামনে আছে এবং তার জন্য কফি তৈরি করতে হচ্ছে।
কফি বানাতে বানাতে কথা গুলো ভাবছিল চৈতি,তার পিছন থেকে হিমেল বলে উঠে।
‘ চৈতি শুন না?’
‘ হ্যা হিমেল ভাই বলেন?’
‘ না বলছিলাম কী ওই তুফা বলছিল শপিং এ যাবে তাই ভাবলাম তুই কী যেতে চাস?ও বলেছে আমি যখন এখানে আসছি তাহলে তোকে যেন জিজ্ঞেস করি।’
‘ ওহ্ তাহলে ঠিক আছে অমিও যাব।’
‘ আচ্ছা তাহলে তুই একটু তুফা কে বলে দিছ কল করে।’
‘ওকে ভাই, আচ্ছা এই নিন আপনার কফি।’
চৈতির বলা প্রতিটি কথা ভালো লাগে হিমেল এর কাছে শুধু ভাইয়া ডাক ছাড়া, ভাইয়া ডাক শুনলেই ইচ্ছে করে ওর ঠোঁ’টে ঠাস ঠাস করে দুটো চু’মু খাই।
‘ আচ্ছা চড়ুই পাখি আমাকে একটা কথা বল?’
‘ অবশ্যই বলব, বলুন কী জানতে চান?’
‘ আচ্ছা তুই সারাদিন ভাই ভাই করিস কেন?ফা লতু একটা।’
কফি মগ নিয়ে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল হিমেল,চৈতি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।হিমেলের বলা সব গুলো কথা মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।
‘ মা আমাকে যেতে হবে তো, তোমার কী হয়েছে নাকি আরও সময় লাগবে?’
নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রোশনা বেগম কে কথা গুলো বলছে আরুহী, আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে তার।কাল রাতে স্কুলের বাচ্চাদের জন্য প্রশ্ন তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল, সব কিছু গুছাতে অনেক রাত হয়ে যায় ফলস্বরূপ এখন এখন এত তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে।রোশনা বেগম মেয়ের খাবারের বক্স নিয়ে এসে হাসি মুখে বলে।
‘ এই নে মা,এটা সময় মত খেয়ে নিস।’
‘ আচ্ছা মা, ঠিক আছে তাহলে এখন আমি আসি।’
‘ আচ্ছা সাবধানে যেও।’
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় দেখা হয় সিফাতের সাথে, মোড়ের দিকে চায়ের দোকানে বসে আছে সে আরুহীকে আসতে দেখে এগিয়ে আসে। তপ্ত শ্বাস ফেলে আরুহী এই লোকটিকে কত বার যে বলছে এমন পাগলামী না করতে তবুও কথা শুনে না। সিফাত এসে ঠিক আরুহীর সামনে দাঁড়ায়, লোকটির চোখের দিকে তাকানো যায় না,বার বার যেন এটাই প্রকাশ পায় ভালোবাসি ভালোবাসি। কিন্তু যতই ভালোবাসা থাকুক এসব ওর জন্য নয়।
‘ আই লাভ ইউ।’
সিফাতের কথা কর্ণকুহ হলেও কোনো জবাব দেয়নি
‘শুনতে পাচ্ছ না? ভালোবাসি তোমায়।’
‘না পাচ্ছি না বুঝলেন? এবার সরে দাঁড়ান।’
‘ তুমি এবার বাড়াবাড়ি করছ?যদি ভালো না বাসো তাহলে কিন্তু,,,’
‘ কী করবেন তাহলে? বলুন আমিও জানতে চাই?’
‘ তুলে নিয়ে যাব, এরপর বিয়ে করে বাসর করে তোমাকে আমার বাচ্চার আম্মু বানাবো। এটাই পরের প্লেন।’
সিফাতের কথা শুনে রিতিমত থ হয়ে যায় আরুহী,আর না দাঁড়িয়ে তড়িগড়ি করে হাঁটতে লাগে।
‘ আরু বেবি আই লাভ ইউ।’
সিফাত চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে, আশেপাশের লোকজন ওদের দিকে তি’ক্ত দৃষ্টিতে তাকায় কিন্তু আরুহী আর এসব পা’ত্তা না দিয়ে স্কুলের পথে হাঁটতে লাগে।
ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে ইশান কে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে চৈতির।ইশান তানিয়ার দেবর হয়,ওর ভাই রিহান তো দেশের বাইরে চলে গেছে এখন বাড়িতে ইশান একা আছে সে জন্য তানিয়া ইশান কে এখানে আসতে বলে। নিশা ইশান কে দেখে একটু লজ্জা পেল মনে হচ্ছে,ইশানের জন্য ওর মনে অনেক ফিলিংস আছে যা এখন পর্যন্ত কেউ জানে না।
‘ ইশান ভাইয়া আপনি এখানে?’
সোফায় বসে আসিফা আর আফতাব এর সাথে কথা বলছিল ইশান তারই মধ্যে হঠাৎ ডাক শুনে পিছু ফিরে দেখে চৈতিকে।নিহার কাছে চৈতি আর নিশা ব্যাগ দিয়ে এগিয়ে যায় ওদের কাছে।
‘ আয় মা।’
‘ বাবা,আই লাভ ইউ।’
‘ আই লাভ ইউ টু মাই ডিয়ার।’
বাবা মেয়ের এমন আদুরে কথা শুনে মুচকি হাসে আসিফা।নিশা আফতাবের পাশে বসে, আফতাব নিশার মাথার এক হাত রাখেন।আড় চোখে মাঝে মাঝে ইশান কে দেখছে নিশা।
‘ তা ইশান ভাইয়া আপনি এখানে কখন এলেন?’
ইশান স্মিত হেসে বলে।
‘ এই তো একটু আগেই এসেছি, তানিয়া ভাবী বলল আসতে।’
আসিফা রহমান উঠে রান্নাঘরে যায়, সবার জন্য হালকা নাস্তা তৈরি করে নিয়ে আসছে।ইশান চৈতির হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আছে,মেয়েটিকে দুই বছর পর দেখেছে,কত কত অপেক্ষা করেছে কবে আসবে কবে তাকে দেখতে পাবে।
‘ আমার মনে হয় এবার তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত,এই নে মেয়ের ছবি দেখ কেমন লাগে?’
খেতে বসেছিল হিমেল,তারই মধ্যে রুম্পা একটা মেয়ের ছবি এনে হাতে ধরিয়ে দেয় হিমেলের।বিয়ের কথা শুনে হেঁচকি উঠে যায় ওর,কাশতে শুরু করে।
‘ এই নে পানি খা,একটু আস্তে খাবি তো?’
‘ তুমি যা বললে মা তার পর কী আর খাওয়া যায়?কী বলছো তুমি এসব, বিয়ে করব মানে?’
‘ বিয়ে মানে বিয়ে, তুই বিয়ে কর আমি এটাই চাই।’
‘ কিন্তু মা তুমি তো জানো আমি,,,’
‘ হ্যা জানি, এখন হয়তো নিজের পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে আয় না হলে আমার পছন্দের মেয়ে কে বউ বানা।’
রুম্পা সিদ্দিক রাগ করে নিজের রুমে চলে যায়, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হিমেল, হঠাৎ পিছন থেকে তুফা এসে জড়িয়ে ধরে হিমেল কে।
‘ ভাইয়া তুমি নাকি চৈতি কে বলেছো আমি আর ও শপিং এ যাচ্ছি?’
‘ হুম বলেছি।’
‘ সত্যি তুমি আমাদের শপিং এ নিয়ে যাবে?’
‘ হ্যা নিয়ে যাব, এখন মিষ্টি বোন আমার বিকেলে রেডি থাকিস আর চৈতি কে বলিস না আমি এসব বলেছি।’
‘ আচ্ছা বলব না কিন্তু তার জন্য ট্রিট দিতে হবে?’
‘ওকে পাবি।’
‘ লাভ ইউ সো মাচ।’
‘ লাভ ইউ টু।’
চলবে….