বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-১৭]

‘‘হ্যালো মা কেমন আছো?’’

কলের ওপরপাশ থেকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা আওয়াজে উত্তর এলো,‘‘ভালো আছি বাবা।তুই ভালো আছিস তো?’’

মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটিয়ে নির্জন জবাব দিলো,‘‘এতক্ষণ ভালো না থাকলেও তোমার সাথে কথা বলে ভীষণ ভালো আছি মা।মা আমি আজ রাতেই গ্রামে আসছি।’’

নির্জন তার দিকেই তাকিয়ে থাকা উৎস,শাওন আর নিহালের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,‘‘সাথে তিনজন অতিথিও আসবে আমার সাথে।’’

এরপর নির্জন তার বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিয়ে উৎসদের কাছে আসলো। উৎসর চেয়ারের পাশের চেয়ারে বসলো খুব আয়েশ করে। গলা ঝেড়ে একবার কেঁশে নিলো।সন্তুষ্ট চিত্তে উৎসর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,‘‘মা বাবার সাথে কথা না বললে মন ভালো থাকে না।তাই প্রতিদিন অন্তত বিশবারের ওপরে কথা বলতেই হয়।’’

নিহাল আর শাওনের কাশি উঠে গেলো।তারা তো আজ তিনদিন হলো বাবা মায়ের সাথে ফোনেও কথা বলছে না।কেমন আছে কেমন কি এটাও জানালো না।নির্জন নিহাল আর শাওনকে বলে,‘‘এমন প্রতিক্রিয়ার মানে কি?’’

শাওন জবাব দেয়,‘‘এতো কথা বলার কি আছে? আমি তো আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথেও এতবার কথা বলি না।’’

হাসলো নির্জন।খুব সুন্দরভাবে শাওনের কথার প্রেক্ষিতে জবাব দিলো,‘‘পিতা মাতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে আপনজন।তারা আমাদের অনেক কষ্টে কোলেপিঠে মানুষ করে, লেখাপড়া শেখায়। ছোটবেলা থেকে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজ কাঁধে বহন করে।অথচ এই জেনারেশনে আমরা বড় হলেই উনাদের কথা ভুলে যায়।নিজেরা নিজেদের কাজে তাদের গুরুত্ব দিতেও ভুলে যায় অনেকসময়। আর খারাপ ব্যবহার সেটা যেন ফ্রি।বৃদ্ধ বাবা মা আমাদের এসব কিছুতে ভীষণভাবে আঘাত পান।মানুষের শারিরীক আঘাত ততোটা কষ্টের হয় না যতটা মুখ হতে নিঃসৃত একটি তিক্ত বাক্য কষ্টে হয়।রূহে নাড়াচাড়া পড়ে যায় তখন।আর উনারা তো আমাদের পিতামাতা।বাবা মায়ের সাথে সবসময়ই ভালো ব্যবহার করা উচিত।উনারা আমাদের যেমন বহুকষ্টে মানুষ করেছেন আমাদের তাদের এসবের মূল্য দেওয়া উচিত।আমি আমার বাবা মাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।আমি মাঝেমধ্যেই গ্রামে যায় আর মাটির চুলাতে মায়ের রন্ধনের খাবার একসাথে পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করি।একসাথে আড্ডা দেই। বৃদ্ধ বয়সে প্রতিটি পিতামাতাই অনেক নিঃসঙ্গ জীবনযাপন কাটান। তাদের সময় দেওয়া উচিত।তবে এখন তো জেনারেশন আলাদা। তোমাদের ব্যাপারে বলতে পারবো না, তোমরা কেমন?’’

কথাগুলো বলতে বলতে পাশে টেবিলে থাকা কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে গেলো।বাকিরা তার কথা শুনলো।আর মনে মনে ভাবলো তারা ঠিক কবে বাবা মায়ের সাথে বসে দুটো ভালোভাবে কথা বলেছে আর একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করেছে। সবসময়ই তো বড়বাজারের হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করতো বন্ধুদের নিয়ে।উৎসর হুট করে বাবার কথা মনে পড়লো।তবে পরক্ষণেই বাবার চিন্তা মাথা থেকে নড়ে গেলো নির্জনের কথা শুনে,‘‘মূলত কুমিল্লাই সেই বৃদ্ধ নিখোঁজ ঘটনাটার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ওসি রুবেল, অফিসার নাওজিব, কামরুল আর বহ্নি। উনারা এখন অবসরপ্রাপ্ত। উনারা কেইসটি সলভ করতে পারেন নি।এছাড়াও একজন উকিলের নাম দেওয়া আছে, হানিফ নাম।কেইসটা বন্ধ করে দেওয়ার পর পরই উনারাও অবসর গ্রহণ করেছেন।’’

উৎস সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,‘‘এরপর শহরের ঘটনায়?’’

নির্জন ঘাটাঘাটি করে জবাব দিলো,‘‘সেখানে এই কেইসের দায়িত্ব ছিলেন অফিসার রাওনাফ।’’

‘‘উনার খোঁজ?’’

রাওনাফের ডিটেইলস চেক করতে থাকে নির্জন,‘‘উনি এখন দেশের বাইরে আছেন।’’

উৎস বুঝলো কিছু একটা রহস্য আছে এখানে।আজ রাতে কুমিল্লা রওনা দিবে তারা।সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবে সব।

_______________

উচ্ছ তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বারান্দায় বসে আছে। এমনিতেই তো রেহানাকে তার সহ্য হয় না তার ওপর মেয়েটা আজকাল তার ওপর অধিকার ফলানোর চেষ্টা করে।উচ্ছ ভাবছে এই মেয়েকে কিভাবে সে দূরে পাঠিয়ে দেবে।তখনই আবার সেখানে পদচারণ ঘটে রেহানার।উচ্ছর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে ওঠে,‘‘খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তুমি খাবে না?’’

বিরক্ত উচ্ছ চোয়াল শক্ত করে রুষ্ট আওয়াজে জবাব দিলো,‘‘ঠান্ডা কেনো বরফ হয়ে যাক খাবার।আমি খাব না।তুমি যাও এখান থেকে।নিজের মুখায়ব এই উচ্ছ তালুকদারের সামনে দেখাবে না।’’

বাঁকা হাসে রেহানা,‘‘আমি তো তোমার স্ত্রী উচ্ছ।এমন ব্যবহারের মানে কি?তোমার বাচ্চা তো…’’

আর বলতে পারলো না।উচ্ছ উঠে এসে গলা চেপে ধরে রেহানার।রেহানার শ্বাস নিতে ব্যাঘাট ঘটায় চোখমুখ লাল হয়ে যায়।জিহবা বের করে গোঙালো। জোরে গলা টিপে ধরে দেয়ালে পিঠ ঠেকালো উচ্ছ। তর্জনী উঁচিয়ে ক্রোধান্বিত হয়ে হুংকার ছুড়ে,‘‘চলে যেতে বলেছিলাম না?আবারও দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণের সাহস পেলি কিভাবে?উচ্ছ তালুকদারের স্ত্রী ভেবে বসে আছিস নাকি?তোর মতো আবর্জনা আমি পায়ের কাছেও রাখি না।তবুও করুণা করে আশ্রয়টুকু দিয়েছি।’’

রেহানা উচ্ছর হাত ছাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও বিফলে যায়।রেহানার চোখ উল্টে আসছে।উচ্ছ ছেড়ে দেয়।ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে রেহানা।চোখ দিয়ে জল বের হলো।গলায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নিলো।নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে উঠে তার দিকে পিঠ দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উচ্ছকে নিজেও গলা টিপে ধরতে গেলে উচ্ছ সড়ে গিয়ে রেহানার হাত ধরে।এক হাতে রেহানার দুহাত মুঠোয় নিয়ে আরেক হাতে সজোরে রেহানার গালে চড় বসিয়ে দেয়।এতজোরে মেরেছে যে রেহানা ছিটকে পড়ে দূরে।উচ্ছ রেহানার সামনে হাটু ভাজ করে বসতেই রেহানা গালে হাত রেখে ক্ষোভ ঝড়িয়ে বলে,‘‘তোমার সমস্ত তথ্য কি ফাঁস করে দেই এটা চাও উচ্ছ।’’

উচ্ছ হেসে ওঠে।উচ্ছর হাসি সুন্দর।রেহানা দেখে উচ্ছকে।এই সুন্দর মুখের আড়ালে যে কি ভয়ানক এক উচ্ছ লুকিয়ে আছে এটা শুধু রেহানায় মনে হয় জানে।উচ্ছ রেহানার দুইগালে একহাত চেপে ধরে বলে,‘‘আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস তুই, আমাকে?তোর কলিজা দেখি খুবই বড় হয়ে গেছে।কলিজা ছিড়ে ফেলতে বেশি সময় লাগবে না।’’

রেহানা কিছুটা দমে যায়।উচ্ছ যে মানুষ না সেটা সে জানে।এই ছেলে একটা সাইকো,মানসিক ভারসাম্যহীন।নিজের মা-কে নিজেই খুন করেছে এই ছেলে।আর সমস্ত দোষ গিয়ে চাপিয়ে দিয়েছে নিজেরই ভাইয়ের ওপর।রেহানা মনে মনে অভিশাপ দিলো, উচ্ছর যেন খুব বাজেভাবে মৃত্যু হয়।উচ্ছ রেহানার গালে আরেকটা জোরে চড় মেরে উঠে দাঁড়ায়।মোবাইলে কল আসতেই ফোন বের করে দেখে রূপক কল করেছে।চোখমুখ কুঁচকে কল রিসিভ করে উচ্ছ।রূপক ওপাশ থেকে বলে,‘‘গ্রামে চলে আয়, চাচা অসুস্থ।’’

আরও বেশি বিরক্ত হলো উচ্ছ।এমনিতেই মাথা গরম তার ওপর যেন আরও আগুনের গোলা ঢেলে দেওয়া হলো মাথায়।দাতে দাত পিষলেও স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরে বলে,‘‘ব্যস্ত আছি।আগামীকাল দেখছি।’’

রূপক বেশি কথা না বলে কল কেটে দেয়।গাড়ির চাবি নিয়ে নিজে রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে।মঞ্জুরির খোঁজ পেয়েছে রূপক।মেয়েটা হুট করেই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছিলো।আজই দেশ ছাড়ার কথা তবে পুলিশ ফোর্সের মাধ্যমে তাকে আটকানো হয় এবং পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।রূপক এখন সেখানেই যাচ্ছে।এই মেয়েও যে খুব একটা সাধু নয় বিষয়টা যেন সে নিজেও খুন ভালোভাবে জানে।রূপক মঞ্জুরির ডিটেইলস জেনে কুমিল্লা যাবে।কুমিল্লার ওসি রুবেলের সাথে দেখা করতে যাবে।কেইসের গভীরে গিয়ে সমস্ত কালপ্রিটকে খুঁজে নিজ হাতে শাস্তি দেবে রূপক।

_________________

আকাশে সূর্য নেই।সাদা মেঘে ঢাকা পুরাকাশ।এর ওপর আবার কুয়াশার চাদরে মোড়া কনকনে ঠান্ডার দিন।এমন দিনে মানুষজন নিজ গৃহে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।আর এদিকে উৎসরা প্ল্যান করছে কিভাবে কুমিল্লা পর্যন্ত যাবে।পুলিশরা যেভাবে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।একবার পেলেই তো ফাঁসি নিশ্চিত। নির্জন উৎস’র কাছে এসে বলে,‘‘উপায় কি?’’

উৎস সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে বলে,‘‘এতো চিন্তা করো না।বাসের টিকিট কাটো।’’

উৎস নিজেই কাজটা করলো।মুখে মাস্ক,কালো ক্যাপ লাগিয়ে চারজন মিলে রওনা হলো বাস কাউন্টারের উদ্দেশ্যে।অভি যাবে না তাদের সাথে।সে এদিকের বিষয় সামলাবে।বাস কাউন্টারে যাওয়ার পর অতি সচেতন ভাবে নিজেদের আত্মগোপনে রাখে উৎসরা। তবে তাদের চালচলনে সন্দেহ হয় আবার এক দম্পতির।হয়তোবা সাজেক ভ্রমণে যাচ্ছে তারা গাজীপুর থেকে।দেশে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উৎসদের নামে।উৎসর ছবিও পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সেই খবরগুলোতে।দেশের মানুষ এমন ভয়ানক খুনির বিষয়ে জানতে পেরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলেই ধারণা।সেই দম্পতির পুরুষজন অতি বাড়াবাড়ি করে অন্যপাশে গিয়ে লুকিয়ে আবার পুলিশকে ইনফর্ম করে দেয় যে কেমন অদ্ভুত সাজসজ্জায় চারজন ছেলে বাস কাউন্টারে বসে আছে।পুলিশ দ্রুত আসবে বলেই জানায়।পরপর দুটো বাস এসে থামে সেখানে।একটা খাগড়াছড়ি যাবে আর অন্যটা কুমিল্লা পর্যন্ত।কুমিল্লার গাড়িতে উঠার জন্য উদ্যত হতেই উৎস বাকিদের থামিয়ে বলে,‘‘তোদের সিট আমি ওই বাসে কেটে রেখেছি। ওই বাস কুমিল্লার মিয়ামি হোটেলে গিয়ে থামবে আধঘণ্টার জন্য।আর আমি সোজা ঢাকায় যাব এখন।ওখান থেকে কুমিল্লার জন্য রওনা দেব।’’

ভ্রু কুঁচকালো নির্জন।একসাথে গেলে কি এমন মহাভারত অসুবিধা হবে?তাই বলে,‘‘উৎস পাগল হলে নাকি?একসাথে গেলে কি এমন হবে?’’

নির্জনের এই একটা ডাকই যেন বিপদ ডেকে আনলো।সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো আবার উৎস। চোখ গেলো তাদের পাশে থাকা সেই দম্পতির দিকে। আগের কথাগুলো শুনতে পেলেও নাম ধরে ডেকে বলা কথাটা যে ঠিকই শুনতে পেয়েছে এরা সেটা উৎসের বুঝতে বাকি রইলো না।উৎস কথা না বাড়িয়ে এবার ঠেলেঠুলে বাসের ভেতরে উঠিয়ে দিলো।দম্পতি দুজনও সেই বাসেই উঠলো।নিজেদের সিটে গিয়ে বসলো আর দৃষ্টি রাখলো উৎসর দিকে। পুরুষজন আবারও পুলিশকে কল করে ইনফর্ম করে দিলো তাদের বাসেই উঠেছে তিনজন আসামী আর অন্যজন নাকি ঢাকা থেকে রওনা হবে।এরই মাঝে উৎস বুদ্ধি করে আবার নির্জনকে মেসেজ করে নেমে যেতে বললো বাস থেকে।সবাই বাস থেকে নেমে গেলে দম্পতি দুজন বুঝতে পারলো না বিষয়টা। নির্জনদের পরের বাসটিতে উঠিয়ে দিলো আর নিজে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করলো।বাস দুটো ছেড়ে দিলো।উৎস ভাবছিলো কি করবে?তখনই তার থেকে কিছুটা দূরে একটি বাইক দেখতে পেলো।বাইকে বাইকার বসে আছে।উৎস সেখানে গিয়ে বলে,‘‘আপনি কি ঢাকায় যাবেন?’’

বাইকার হেলমেট পড়া ছিলো শরীরে কালো একটি জ্যাকেট, কালো জিন্সের প্যান্ট আর কালো চশমা পড়া ছিলো।মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো।উৎস করুণার সুরে বলে,‘‘কাইন্ডলি আমায় যদি ঢাকা উত্তরায় নামিয়ে দিতেন।’’

বাইকার ঘার ঘুরিয়ে সিটে বসার ইশারা করলো। উৎসও নিঃসন্দেহে বসে পড়লো।এরপর বাইকার বাইক স্টার্ট দেয়।কিছুদূর যেতেই পুলিশের কিছু গাড়ির সামনে পড়ে গেলো বাইকটি।দম্পতি দুজন লুকিয়ে ছবি তুলে পুলিশদের পাঠিয়ে দিয়েছিলো যার দরুণ পুলিশরা উৎসকে স্পষ্ট চিনে ফেলে।উৎস বিষয়টা বুঝতে পেরে খানিক হাসলো।পুলিশের গাড়ি থেকে পুলিশ নেমে তাদের দিকে আসতেই বাইকার বাইক ঘুরিয়ে একটি গলির ভেতরে ঢুকে যায়। পুলিশের বাইক বহরও আবার তাদের ধাওয়া করা শুরু করে।পুরো পুলিশ ফোর্স পেছনে লাগিয়ে দেওয়ার হুকুম আসে ওপরমহল থেকে।এদিকে উৎস নিশ্চিন্তে বাইকারের কোমড় জড়িয়ে ধরে।বাইকটা অলিগলি বেয়ে এতদ্রুত চললো যে মুহুর্তের মাঝেই আবার সেই পুলিশের বাইক বহরকে পিছিয়ে দিলো। বাইক এসে থামলো সম্পূর্ণ অচেনা এক রাস্তায়।তবে বাইকার এমনভাবে বাইক চালালো যেন কত অভিজ্ঞ একজন।পুরো বাংলাদেশের অলিগলি যেন খুবই চেনা তার।বাইকটা চলতে চলতে আবারও মেইন রাস্তায় গিয়ে আপতিত হলো।এরই মাঝে আবারও পুলিশের গাড়ি তাদের পেছনে পড়লো।পুলিশের গাড়ি হতে গুলি মারছে তাদের দিকে।নিখুঁত ভঙ্গিমায় এবার বাইক ব্যাকাত্যাড়া ভাবে চালানো হলো।কিছুক্ষণ পর বাইকের দুপাশে দুই পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে।গুলি না ছুড়লেও বাইক থামার তাগদা দেওয়া হয়।তবে উৎসকে নিশ্চিন্ত দেখা গেলো। বাইকার এক হাতে পকেট থেকে কিছু একটা বের করে ডান পাশের পুলিশের গাড়িতে থাকা ড্রাইভারের দিকে কিছু একটা ছুড়ে দিতেই এরই মাঝে ড্রাইভার কেমন হয়ে যায় আর ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে না পেরে এক্সিডেন্ট করে বসে।বাম পাশের পুলিশের গাড়িটা একদম তাদের নিকটে আসতেই পুলিশ গুলি ছোড়ার আগেই পুলিশের হাত থেকেই পিস্তল কেড়ে নেয় বাইকার। আর নিজ হস্তে পুলিশের গাড়ির টায়ারে গুলি করে টায়ার পাম্পছার করে দেয়।এতে পুলিশের গাড়িটা থেমে যায়।তবে মাথা বাড়িয়ে অন্য একজন পুলিশ তাদের দিকে গুলি করতে চাইলে বাইকার সেই পুলিশটির হাতের নিশানা বরাবর গুলি মারে।এতে সেই পুলিশটির হাত থেকে পিস্তল পড়ে যায়।এমন নিশানা তাও আবার বাইক চালাতে চালাতেই গুলি করা একজন নারীর পক্ষে কিভাবে সম্ভব সেটা উৎস শুধু তাকিয়ে তাকিয়েই দেখছে।চিবুক সামনের জনের পিঠে ঠেকিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ছেড়ে দিলেই যেন পড়ে যাবে।সামনের জন হাতটা ছাড়াতে চাইলো এবার।উৎসও ছেড়ে দিলো।নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে বাইকটি থামালো।উৎস নেমে গেলো।এটা আপাতত কিছুটা হলেও সেইফ জায়গা।তবে গন্তব্য এখনও অনেকদূর।আর বাধা বিপত্তি?সেটা তো আরও একধাপ এগিয়ে।

দুহাত বুকে ভাঁজ করে তাকালো হেলমেট পড়নে নিজেকে সম্পূর্ণ অচেনা আচ্ছাদনে আবৃত রাখা মানবীর দিকে।উৎস একটু এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,‘‘নিঃসন্দেহে তুমিও আমার প্রেমে পড়ে গিয়েছো…’’

থেমে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে আবারও ফিসফিস করে আওড়ায়,‘‘ড. আশিন।’’

চলবে…

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top