বৃষ্টি হয়ে নামো [পর্ব-১৬]

আজও সবার আগে বিভোরের ঘুম ভাঙ্গে।ফ্রেশ হয়ে সায়নকে ডেকে তুলে।তারপর দিশারিকে।ধারার রুমের সামনে এসে থমকে যায়।গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে।সকাল সকাল বিভোরকে দেখে ধারা অস্বস্তিতে ভোগতে পারে।তাই আর ডাকলোনা।দিশারির রুমের দরজায় কড়াঘাত করলো।দিশারি বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে।বিভোর বললো,

—-“ধারাকে ডেকে তোল।”

কথা শেষ করে দরজার সামনে থেকে সরে যায়।

দিশারি বিরক্তিতে কপাল ভাঁজ করে ধারার রুমের সামনে আসে।কয়েকবার করাঘাত করার পর ধারার সাড়া পাওয়া যায়।রুমে আসার পথে এলানের সাথে দেখা হয়।কিশোরী বয়স থেকেই দিশারির ইচ্ছে ফর্সা ধবধবে শ্বেতাঙ্গ যুবকের সাথে প্রেম করার।আর এলান নিশ্চিন্তে একজন সুদর্শন পুরুষ!প্রথম দেখাতেই ভালো লাগার মতোন।দিশারি এলানের আকর্ষণ পেতে হাত নাড়িয়ে ‘হাই’ বললো।এলান এগিয়ে আসে।ইংলিশে বললো,

—-“আপনাকে কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে।”

—-“গতকাল রাতেই আমাদের দেখা হয়েছিল।প্লীজ মনে করার চেষ্টা করুন।”

দিশারির কেঁদে দেওয়ার অবস্থা।এই শ্বেতাঙ্গ লোকটিকে মনে করাতেই হবে তাঁদের গতকাল দেখা হয়েছিল নয়তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে!এলান গুপ্তধন পেয়েছেন এমন প্রকাশভঙ্গি নিয়ে বললো,

—-“মনে পড়েছে।বেবরের সাথে দেখেছি!”

দিশারির মুখের সুন্দর মসৃণ ত্বক কুঁচকে যায়।খাঁটি বাংলায় বলে,

—-“বেবর কেডা?”

—-“সরি?”

—-“বেবর কে?”

—-“গতকাল রাতে যে আহত হলো।মনে পড়েছে?”

দিশারি বিড়বিড় করে,

—–“শালা গবেট।”

কিন্তু,মুখে হাসি রেখে সুন্দর করে টেনে বললো,

—-“এইতো চিনেছেন।আপনি বুঝি এই হোটেলেই উঠেছেন?”

—-“হ্যাঁ এই হোটেলেই।”

—-“ওহ আচ্ছা।”

দিশারি কথা খুঁজে পাচ্ছেনা।এলান বললো,

—-“দেখা হয়ে ভালো লাগলো।বাই।”

দিশারির মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।কোনোমতে বললো,

—-“চলে যাবেন!আচ্ছা যান।বাই।”

ইসলামিয়া রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে জাপানীজ টেম্পলের দিকে যাত্রা শুরু করে ওরা।আজকের প্ল্যান অনেকগুলো প্লেস দর্শন করা।জাপানীজ টেম্পলে পৌঁছে ধারা দৌড়ে একদম উঁচু জায়গাটায় গিয়ে দাঁড়ায়।দার্জিলিং শহরের একদম উঁচু জায়গাটায় ধারা দাঁড়িয়ে আছে।এখান থেকে পুরো শহরটা চোখে পড়ছে।ধারার নিজেকে পাখি মনে হচ্ছে।দু’হাত পাখির ডানার মতো ছড়িয়ে দেয়।হুহু করে বাতাস বইছে।ধারার সিল্কি চুল অবাধ্যের মতো উড়ছে।যেনো মাথা থেকে ছিড়ে উড়ে যেতে চাইছে।বিভোর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ধারাকে দেখছে।সকালে প্রথম দেখা হতেই ধারা বললো,

—-“আজ ঘুরতে যেতে হবেনা।রেস্ট করুন।কতোটা আঘাত পেয়েছেন।আর এরকম ভারী শার্ট,জ্যাকেট পরেছেন কেনো?ব্যাথা পাচ্ছেন না?এতো কেয়ারলেস হলে চলে?”

ধারার এতো প্রশ্ন শুনে বিভোর হেসে ফেলে।বলে,

—-“এর চেয়েও বড় আঘাত নিয়ে বরফের মাঝে থেকেছি ধারা।আপনি এতো চিন্তা করবেন না।আমার কষ্ট হচ্ছেনা।”

ধারার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।অবাক স্বরে বললো,

—–“এর চেয়েও বড় আঘাত?কই দেখি।”

বিভোর নখ কামড়ে হাসে।তখন কপালের উপর ছড়িয়ে থাকা কয়টা চুল হালকা নেড়ে উঠে।যা সুক্ষ্ম চোখে খেয়াল করে ধারা।তারপর নির্বিকার ভাবে বললো,

—–“ওহ বুঝছি।বউ ছাড়া কাউকে দেখানো যাবেনা।”

বিভোর মৃদু হেসে বললো, 

—–“আমার বউ তো আমার সামনেই।”

শোনামাত্র ধারার বুক কেঁপে উঠলো।কোথেকে যেনো উত্তাল অবাধ্য ঢেউ এসে সমস্ত মনের ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিলো।সত্যি তো,সেই তো বউ!

.

তারপর ওরা গেলো প্রায় আটশো ফুট উঁচুতে স্থাপিত গোর্খাল্যান্ড স্টেডিয়ামে।কিছু ছবি তুলে দিশারি।দিশারির ফটোগ্রাফারের হিসেবে সায়ন ভূমিকা পালন করছে।এরপর ভিক্টোরিয়া ফলস কিংবা শতবর্ষের প্রাচীন মন্দির দিরদাহাম টেম্পলে ঘোরাঘুরি করলো।তেনজিং রকে এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগের স্মরণে এক পাথরের নামকরণ করা হয়েছে। আকারে ছোট হলেও উঁচু পাহাড়ের মতোই তার দম্ভ।সেটিও দেখা শেষ হলো।বিভোর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—-“এখানে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।এছাড়াও পর্যটকদের জন্য স্বল্প উচ্চতার পর্বতারোহন অভিজ্ঞতা হয়ে যায় এখানে।আমি এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছি দ্বিতীয়বারের মতো যখন দার্জিলিং আসছি।”

সেখান থেকে ওরা সরাসরি চলে আসে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক।পদ্মজা নাইডু জুলজিক্যাল পার্ক এবং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট দুটোর প্রবেশফটক একটাই। একটা টিকেটেই দুটি জায়গা দেখে নেওয়া যায়।ভারতের উচ্চতম চিড়িয়াখানাগুলির মধ্যে এই পদ্মজা নাইড়ু জুলজিক্যাল পার্কই সব থেকে বড়। 

চিড়িয়াখানা চত্বরের মধ্যেই রয়েছে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (এইচএমআই)। এমন ভাবে পথ নির্দেশনা করা হয়েছে যাতে পর্যটকরা চিড়িয়াখানার একটা দিক দেখতে দেখতে চলে যাবেন এইচএমআইয়ে।আবার ফেরার সময় চিড়িয়াখানার অন্য একটা দিক দেখতে দেখতে ফিরবেন।পার্কের প্রবেশ পথেই ওরা দেখতে পায় অনেকগুলো দোকান সাজানো আছে।বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা।শীতের শাল, জ্যাকেট, ট্রেডিশনাল ছুরি, পেইন্টিংসহ নানা জিনিস এখান থেকে দরদাম করে কিনছে অনেক ক্রেতা।পার্কের প্রবেশমূল্য সার্কভুক্ত দেশের জন্য জনপ্রতি ৬০ টাকা।

ধারার চিড়িয়াখানা খুব পছন্দ।সে আগে আগে হেঁটে আসে।চিড়িয়াখানার বিশেষ বাসিন্দা রেড পান্ডা। ধারা একটা রেড পান্ডাকে অনেকবার ডাকে।কিন্তু কিছুতেই সামনে আসতে চায়না।ধারার মনে হলো পান্ডাটি একটু যেন লাজুক প্রকৃতির। ক্যামেরায় ধরার জন্য কয়েক সেকেন্ড থিতু হয়ে বসে আবার পালিয়ে যায় পান্ডাটি।একটু দূরে ভাল্লুকও দেখতে পায়।এছাড়া বাঘ,চিতা বাঘ, স্নো-লেপার্ডদের দেখা পাওয়া যায়। ধারার চোখ চকচক করে উঠে।

পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে দারুণ পোজ মারছে ভাল্লুকটি।তা শুধু বিভোর আর ধারা উপভোগ করছে।দিশারি ভয়ে সায়নকে খামচে ধরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে।বারবার সায়নকে বলছে,

—-“বাঘ, ভাল্লুক এগুলো যদি খাঁচা ভাইঙ্গা চলে আসে!তখন কি হইবো?এখানে কেন আনলি আমারে?উফফ!তখন কে বাঁচাবে আমাকে।”

সায়নের বিরক্তিতে কলিজা ফেটে যাচ্ছে।মেয়েটা এতো ন্যাকামি কেন করে।আবার খামচি মেরে ধরে রেখেছে।কিছুতেই সে সামনে যেতে পারছেনা।সায়ন বিড়বিড় করলো,

——“শালার কপালে জুতার বাড়ি।”

এরপর ওরা পৌঁছালো ‘হ্যাপি ভ্যালি টি-এস্টেট’। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে এই চা-বাগান। এখান থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করে নেয় দিশারি।

সেখান থেকে বের হয়ে সায়ন বললো,

—-“দার্জিলিং মানুষদের কি সুন্দর ব্যবহার।”

ধারা হেসে তাল মিলালো,

—-“ঠিক ভাইয়া। খুবই বন্ধুবৎসল, ভীষণ অমায়িক  ব্যবহার দেখলাম।”

বিভোর ফোড়ন কাটলো, 

—-“কারণ পর্যটকদের আসা-যাওয়ার উপরেই ওদের জীবিকা নির্ভর করে।আর তাই ট্যুরিস্টদের খুব সমাদর করে তাঁরা।”

সায়ন বললো,

——“এখানকার মানুষজন দেখি প্রায় সবাই মোটামুটি বাংলা বলতে এবং বুঝতে পারে।”

বিভোর বললো,

—–“হম।ওরা প্রায় অনেকগুলো ভাষায় রপ্ত করে নিয়েছে।পর্যটকদের চাওয়া-পাওয়া বুঝার জন্য।”

তখন তিনটা ত্রিশ বাজে।দিন অনেক বাকি এখনো।ছোটখাটো প্রায় সব জায়গা দেখা শেষ।হোটেলে ফেরার পথে ধারা বললো,

—–“এখনি ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।”

বিভোর বললো,

—–“হোটেলে পৌঁছাতে ত্রিশ মিনিট বাকি।হেঁটে গেলে এক ঘন্টার উপরে লাগবে।হেঁটে যেতে চান?এতে অবশ্য পাহাড়ের সৌন্দর্য খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।”

ধারা কিছু না ভেবেই বললো,

—-“অবশ্যই চাই।ড্রাইভার গাড়ি থামান….

দিশারি বাধা দেয়,

—-“না,না কি কস ?মাথা খারাপ হইছে?”

ধারা মন খারাপ করে বলে,

—-“প্লীজ আপু।এখনি ফিরতে চাচ্ছিনা।”

বিভোর বললো, 

—-“থাকুক না।হেঁটে যাক।তোর সমস্যা কি।”

দিশারি কটকটে গলায় বললো,

—-“আমি হাঁটুমনা।টায়ার্ড লাগতাছে।”

—-“তুই সায়ন চলে যা।আমি ধারাকে নিয়ে হেঁটে আসছি…..

দিশারি কিছু বলতে চেয়েছিল।তাঁর আগেই সায়ন ইশারায় চুপ করতে বললো।দিশারির মনে পড়ে,ধারা আর বিভোর স্বামী-স্ত্রী।আর ওরা দুজন কিছুক্ষণ একা একসাথে থাকলে অনুভূতি গুলো আরো তাজা হয়ে উঠবে।

দিশারি ড্রাইভারকে তাড়া দেয় গাড়ি থামাতে।গাড়ি থামতেই দিশারি ঠেলে বিভোর আর ধারাকে নামিয়ে দেয়।বিভোর ভারী অবাক হলো।দিশারির হঠাৎ করে কি হলো ঠাওর করতে পারলোনা বিভোর।গাড়িটা সুড়ৎ করে চোখের আড়াল হয়ে যায়।নির্জন,নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশের পাকা রাস্তায় তাঁরা দুজন একা।কি বলে কথা শুরু করা উচিৎ বুঝে উঠছেনা দুজনই।এরিমধ্যে ধারার মনে পড়ে গতকাল রাতে বিভোরের বলা একটি কথা।বিভোর বলেছিল, 

—–“বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রাভেলিং করা মেয়েটা রক্ত দেখে এতো ভয় পায়!এতো ভীতু?”

ধারা আৎকে উঠে।বিভোর কীভাবে জানে,সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঘোরাঘুরি করে!কীভাবে?তবে কি এইটাও জানে,সে যে বিয়ের রাতেও ট্রাভেলিংয়ের জন্য পালিয়েছে।বয়ফ্রেন্ড-টয়ফ্রেন্ড নামে আদৌ কিছুই নাই!

বিভোর তুড়ি বাজিয়ে ধারার মনোযোগ আকর্ষণ করে।ধারা সচকিত হয়।বিভোর বললো,

—-“এতো আনমনা হয়ে রাস্তাঘাটে কিছু না ভাবাই ভালো।”

ধারা হেসে কানে চুল গুঁজে।দুজন চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। মুখে তাঁদের কোনো কথা নেই।

পাহাড় বড় রহস্যময়।একটু আগেই ঝকঝকে আকাশ ছিলো।হঠাৎ চতুর্দিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল।অতর্কিতেই যেন এক বিপদের সংকেত নিয়ে হাজির হল কালো মেঘের দল।হুহু করে বইতে লাগলো হিমশীতল হাওয়া।কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি নামবে।বিভোর উত্তেজিত হয়ে বললো,

—–“বৃষ্টি আসবে।আপনার বৃষ্টিতে কোনো সমস্যা হয়?”

—–“না।”

—-“তবুও দার্জিলিঙয়ের বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।জ্বর আসতে পারে।কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ গলে এই বৃষ্টি হয়।খুবই ঠান্ডা জল।”

—-“সে ঠিক।কিন্তু যাবোটা কোথায়?”

বিভোর এদিক-ওদিক তাকায়।কিছুটা ধরে ৩০-৪০ ফুট নিচে একটা সমতল জায়গা দেখতে পায়।সমতল জায়গাটা একটা পাহাড়ের চূড়া।জায়গাটির ১৫-২০ ফুট উপরে অন্য আরেকটি পাহাড় বাঁকা হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ফলে,বৃষ্টির পানি সমতল জায়গাটিতে পড়ার সম্ভাবনা নেই।বৃষ্টির পানি থেকে ধারাকে সুরক্ষিত রাখার মতো উপযুক্ত জায়গাই মনে হলো বিভোরের।আর ধারাকে নিয়ে এইটুকু পাহাড় বেয়ে নামা বিভোরের কাছে পানিভাত।কিন্তু,যদি ঝড় উঠে পাহাড় ধসে মারা যাওয়ার আশঙ্কা আছে!তবে আবহাওয়া বলছে,ঝড় আসবেনা।আবহাওয়া সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে বিভোরের।ধারার এক হাত শক্ত করে ধরে বললো,

—-“দুই মিনিট আমার সাথে দৌড়ান প্লীজ।”

ধারা হতবিহ্বল!সে দৌড়ের মাঝে বললো,

—“প্লীজ আপনি এভাবে দৌড়াবেন না।আপনার হাত আহত।”

কে শুনে কার কথা!ইতিমধ্যে বৃষ্টির ফোটা পড়া শুরু করেছে।যত দ্রুত সম্ভব পাহাড় বেয়ে ধারাকে নিয়ে নিরাপদে পৌঁছাতেই হবে।নয়তো,মেয়েটা নিশ্চিত এই বৃষ্টির পানিতে জ্বর বাঁধাবে।

আজকাল ওরা বড্ড নেশা করছে।যে নেশার নাম ভালবাসা।কি জানি কেনো কিন্তু নেশা টা মহামারি আকারে বেড়ে চলেছে।একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে,ছোট্ট একটা বিপদ থেকেও সুরক্ষিত রাখতে চাইছে।একজন আরেকজনের ভাগ কোনো রকম অসুখকেও দিতে চাইছেনা।সাংঘাতিক ব্যাপার-স্যাপার!

চলবে……

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top