নবোঢ়া [পর্ব-৩১]

নীল রঙের গাড়িটা চুপিসারে এগিয়ে চলছে রাতের অন্ধকারে। জাওয়াদ স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরে রেখেছে, তার চোখে-মুখে এখনো রাগের আভাস। পাশের সিটে বসে আছে গুলনূর। সে বাইরের দৃশ্য দেখছে। দুপাশের ধানের ক্ষেতগুলোকে কালো মখমলের মতো ঢেকে রেখেছে গভীর রাত। এখানে-ওখানে ছড়ানো মাটির ঘরগুলো থেকে কুপি বাতির আলো জ্বলছে মিটিমিটি করে।

হঠাৎ করেই গাড়িটা থেমে গেল।

চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল, তারা এসে দাঁড়িয়েছে নদীর তীরে। দূরে জোনাকিরা নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে।

জাওয়াদ গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল নদীর দিকে। একটা পুরনো বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে বের করল ‘কিংস্টন’ সিগারেটের প্যাকেট। লাইটারের আগুনে সিগারেট ধরাতেই একটা লাল বিন্দু জ্বলে উঠল অন্ধকারে।

গুলনূর দাঁড়িয়ে রইল গাড়ির পাশে। তার বুকের ভেতর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে নাম না জানা অনুভূতি। জীবনে প্রথমবার সে এমন অচেনা আবেগের সামনে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ আগে জাওয়াদের বুকে মাথা রাখার সেই মুহূর্তটা বারবার ফিরে আসছে স্মৃতিতে। কানে বাজছে নিজের হৃদয়ের স্পন্দন, উৎসবের ঢাকের মতো।

হঠাৎ জাওয়াদের ভেতর জেগে উঠল ঝড়ের তাণ্ডব। জ্বলন্ত সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলল দূরে। একে একে লাথি মারতে লাগল বটগাছটাকে।

গুলনূরের বুক কেঁপে উঠল। ছুটে গেল জাওয়াদের দিকে। কাছে গিয়েই থমকে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়েও স্পর্শ করতে পারল না তাকে। জাওয়াদ তখন উবু হয়ে বসে পড়েছে মাটিতে, ক্লান্ত নিঃশ্বাসে হাঁপাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকাল। তার রক্তবর্ণ চোখে জমে থাকা জল চাঁদের আলোয় টলটল করছে। দূরে নদীর কলকল শব্দ আর বাতাসে বটপাতার খসখস আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলল, “আমি আমার পরিবারকে খুব ভালোবাসতাম।” কথাগুলো বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। তারপরই মুখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে। তার কাঁধের কাঁপুনি বলে দিচ্ছিল যে সে কাঁদছে।

গুলনূর দাঁড়িয়ে রইল নিঃশব্দে। তার বুকের ভেতর হাজারো কথা ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ছে, কিন্তু ঠোঁট নড়ল না। কী সান্ত্বনাই বা দিতে পারে একজন বোবা দাসী? কিন্তু মনটা বারবার বলছে, একটু এগিয়ে গিয়ে হাত রাখতে জাওয়াদের কাঁধে, একটু ছুঁয়ে দিতে তার থরথরে শরীরটা।

কিন্তু না, সে শুধু একজন দাসী। জমিদার বাড়ির চাকরানী। একজন দাসীর পক্ষে জমিদার-পুত্রকে স্পর্শ করার দুঃসাহস দেখানো অপরাধের সামিল। তাই সে দাঁড়িয়ে রইল পাথরের মূর্তির মত, নিজের জায়গায়।

ভোরের কোমল আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সুফিয়ান শেষ রাত থেকে নিস্তব্ধ বাগানে একা বসে আছেন। একমাত্র সন্তান জাওয়াদ রাগে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ললিতার আর্তনাদে বাড়ির প্রতিটি কোণ বিষণ্ণ হয়ে উঠেছিল। সেই অসহনীয় পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে তিনি শেষরাতে বাগানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

ব্যবসায়িক জীবনের নৈরাশ্যজনক অবস্থা, তার উপর ছেলের এই অযথা রাগ! একমাত্র সন্তানের প্রতি অগাধ মমতা আর তার আচরণের বেদনা, এই দুইয়ের টানাপোড়েনে তিনি বিপর্যস্ত। ললিতাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো মানসিক শক্তিও তার নেই। তাই নিঃশব্দে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছেন বাগানের নির্জনতায়।

হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে গেটের কাছে ঘোড়ার ক্ষুরধ্বনি ভেসে এলো। সুফিয়ান চমকে উঠলেন, “শব্দর!” নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। শব্দর ধীরে ধীরে ঘোড়া থেকে নেমে আসছে।

সুফিয়ান দ্রুত এগিয়ে গেলেন।

“কোনো সমাধান হলো?”

শব্দর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, “সব শেষ ভাইজান। কেউ আমাদের ফসল কিনবে না।”

সুফিয়ানের হাতের লাঠিতে আঙুলের বাঁধন আরও দৃঢ় হলো।

“রহমান সাহেব বললেন, আমাদের এলাকার ফসলের মান নেই। খান সাহেব বললেন তাদের গুদাম ভর্তি, আর জায়গা নেই।” শব্দর কথার মাঝে একটু থেমে নিল। “আর হোসেন সাহেব…” তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে এলো, “তিনি সরাসরি জানিয়ে দিলেন, জমিদারদের কাছ থেকে আর ফসল কিনবেন না। সবার কথার ধরন একই রকম। কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। মনে হচ্ছে সবাই কারো কথায়…”

সুফিয়ান আর দাঁড়ালেন না। লাঠি ভর দিয়ে ধীর গতিতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। শব্দর দাঁড়িয়ে রইল, মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া পথিকের মতো তার চোখে জমে উঠল অসহায় বিষাদ।

দুপুর। রাজধানীর আকাশে সূর্য অগ্নিবর্ষী। জাওয়াদের গাড়িটি শহরতলীর তপ্ত রাস্তা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। তখনকার সময়ে শহরের গতি ছিল অনেকটা স্তিমিত। পাশের সিটে গুলনূর। গরমে বিবর্ণ ওড়নার আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে মাঝে মাঝে। চোখে উদাস শূন্যতা, কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। রাস্তার মোড়ে একটি পুরনো দোকানের সামনে গাড়িটি থেমে গেল। দোকানের সামনে পানের বাটায় জল ছিটিয়ে দিচ্ছে দোকানি।

জাওয়াদ নেমে গেল। দোকানের টেলিফোন বুথে ঢুকে নম্বর ঘোরাল। ঘামে ভিজে গেছে পিঠটা। কথা শেষে ফিরে এসে গাড়িতে বসল। গুলনূর তখনো স্থির। দুপুরের খর রোদ তার মুখে এসে পড়ে নতুন ছায়া তৈরি করেছে।

মিনিট দশেক পর একটি যুবক এগিয়ে এলো। তার পরনে গাঢ় রঙের পাঞ্জাবি, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

“ভাইজান চাবিটা,” যুবকটি চাপা গলায় বলল।

জাওয়াদ পকেট থেকে চাবি বের করে দিল, “সাবধানে নিও।”

“জ্বি, আচ্ছা। ঠিকমতো পৌঁছে দেব,”

বলে যুবকটি গাড়িতে উঠল।

দুপুরের দাবদাহে নীল গাড়িটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল রাস্তার বাঁকে। জাওয়াদ গুলনূরের দিকে তাকাল। তার ঘামে ভেজা হাতটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, “চলো, হেঁটে যাই। সামনেই নদী। ফেরি দিয়ে ওপারে যাব।”

দূরে নদীর জলে রোদের প্রখর আভা। পথের ধারে দোকানগুলোতে গরমের অবসাদ। বাতাসে ভেসে আসে নদীর স্রোতের শব্দ আর দূরের ফেরিঘাটের হাঁকডাক। দুজনের পায়ের নিচে তপ্ত ফুটপাতের ইট থেকে উঠছে অস্পষ্ট শব্দ।

নদীর ঘাটে পৌঁছতেই ফেরিটা এসে গেল। কয়েকজন যাত্রী উঠল আগে। তারপর জাওয়াদ আর গুলনূর। ফেরির এক কোণে দাঁড়াল দুজন।

“ভাড়াটা নেন,” জাওয়াদ ফেরিওয়ালার দিকে এগিয়ে দিল টাকা।

“দুইজনের আট টাকা,” ফেরিওয়ালা টাকা নিয়ে পকেটে রাখল। “বউ রে লইয়া যাইতাছেন? গরমে বেচারি কষ্ট পাইতাছে।”

জাওয়াদ হালকা হাসল। “না মামা, তবে আপন মানুষ।”

এক ঝাঁক লোক উঠল ফেরিতে। গুলনূর জড়োসড়ো হয়ে ওরনা টেনে নিল মাথায়। দুপুরের রোদে তার মুখের ঘাম চকচক করছে। জাওয়াদ এগিয়ে এসে তাকে আড়াল করে দাঁড়াল।

ফেরি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর বুকে তরঙ্গ খেলা শুরু হল। মাঝনদীতে এসে একটা তীব্র ঢেউয়ের ধাক্কায় গুলনূরের পা টলে গেল। মুহূর্তের জন্য সে জাওয়াদের দিকে ঝুঁকেই পড়ছিল, দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। সেই অল্প সময়ের চোখাচোখিতে তার চোখের তারায় বিস্ময় আর লজ্জার রঙ খেলে গেল। চোখ নামিয়ে নিল তাড়াতাড়ি।

মধ্যনদীতে বাতাস বইছে অল্প অল্প। হঠাৎ আরেক ঢেউয়ের দোলায় গুলনূর অসহায়ভাবে জাওয়াদের হাত চেপে ধরল। সেই ক্ষণিক স্পর্শ বৈশাখী ঝড়ের মতো দুজনের শরীরে বিদ্যুৎ খেলিয়ে দিল। গুলনূর তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিল, কিন্তু সেই স্পর্শের শিহরণ থমকে রইল দুজনের মাঝে।

“আরে চাচা, নাও একটু আস্তে চালান।,” জাওয়াদ ফেরিওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল।

ফেরিওয়ালা বলল, “চিন্তা কইরেন না সাহেব। চল্লিশ বছর ধইরা এই নাও চালাইতাছি। আপনের বউরে কন দেখি, হাত ধইরা থাকতে।”

জাওয়াদ মৃদু হেসে বলল, “বউ না চাচা।”

বৃদ্ধ হাসল, “বউ না অখন। পরে হইব।

বুড়া মানুষ, চিনি না চোখে দেখলেই?”

গুলনূর আরও জড়োসড়ো হয়ে গেল। তার কানের লতি সন্ধ্যার আকাশের মতো রাঙা হয়ে উঠল। নদীর কলকল জলে ছায়া ফেলে যাওয়া দুটি তরুণ-তরুণীর দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা আর যাত্রীরা মৃদু হাসছিল।

ফেরি থেকে নেমে জাওয়াদ ঘাড় চুলকাতে-চুলকাতে বলল, “এই মানুষগুলো না বড্ড সরল। কী থেকে যে কী বলে!”

দুজনে হাঁটতে শুরু করল। পথের দুপাশে ছোট ছোট দোকান। মশলার গন্ধ ভেসে আসছে কোন এক মুদি দোকান থেকে।

বাজার পেরিয়ে একটা সরু গলি। পুরনো ইমারতগুলোর গায়ে সময়ের দাগ। গলির শেষে একতলা একটা বাড়ি। দেয়ালে হলুদ রঙ করা, তবে অনেকটাই খসে গেছে। সামনে ছোট্ট একটু বাগান, শুকনো ঘাস আর কয়েকটা বেলফুলের গাছ। জানালার গরাদে জড়িয়ে আছে মাধবীলতা।

জাওয়াদ পকেট থেকে চাবি বের করল। তালা খুলতে খুলতে বলল, “আমরা বন্ধুর বাড়ি। পুরো পরিবার সৌদিতে আছে। এখানেই গত দুই বছর ছিলাম।” একটু থেমে গুলনূরের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার সমস্যা হবে না তো?”

গুলনূর মাথা নাড়ল। দরজার কাঠের ফাঁক দিয়ে একটা টিকটিকি বেরিয়ে গেল দ্রুত।

ঘরে ঢুকতেই ভ্যাপসা গন্ধে গুলনূরের নাক কুঁচকে গেল। জাওয়াদ এক এক করে জানালাগুলো খুলে দিতে লাগল। বাইরের আলো এসে পড়ল ঘরের মেঝেতে। ধুলোয় ঢাকা পুরনো আসবাবপত্র।

“তুমি হাত-মুখ ধুয়ে নাও। আমি বাজার থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি।” জাওয়াদ টেবিলের ওপর থেকে পুরনো খবরের কাগজগুলো তুলতে তুলতে বলল।

জানালার পর্দা ঝাড়পোঁছ করতে করতে থামল। “খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা বাজারে যাব। তোমার তো কিছুই নেই সঙ্গে। জামাকাপড় কিনতে হবে। একটা গামছাও। এই গরমে গোসল না করলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে।”

খাটের চাদর ঝাড়তে ঝাড়তে থমকে দাঁড়াল। পকেট থেকে টাকার তোড়া বের করে দেখল। “মাছ-মাংস কিনতে হবে। কিন্তু হাতে টাকা খুব কম। এই দ্যাখো…” বলে টাকাগুলো গুনতে লাগল। “আপাতত এই ঘড়িটা বেচে দিলে কিছু টাকা আসবে। আগে যখন এখানে ছিলাম, পাশের অফিসে চাকরি করতাম। দেখি, এখনো জায়গা আছে কি না।”

গুলনূর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে বিস্ময়। জমিদার বাড়ির ছেলে – যার রাগে কাঁপত গোটা পরিবার, সেই মানুষটা অন্যের অফিসে চাকরি করেছে! নিজের হাতে ঘর পরিষ্কার করছে!

আলমারির ধুলো মুছতে মুছতে জাওয়াদ বলল, “খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করো না। যাই হোক একটা ব্যবস্থা হবেই। তবে রান্নাটা তোমাকেই করতে হবে। আমার দ্বারা রান্নাবান্না হয় না।”

গুলনূর লজ্জায় মাথা নিচু করল।

“তুমি অপেক্ষা করো, আমি আসছি।” বলেই জাওয়াদ বেরিয়ে গেল। গুলনূর জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দেখল জাওয়াদ বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে বাড়িটা দেখতে শুরু করল। পুরনো ছোট্ট পাকা বাড়ি– তিনটে ঘর নিয়ে। সামনের বড় ঘরটায় দুটো জানালা, একটা খাট, পুরনো কাঠের আলমারি আর টেবিল চেয়ার। দেয়ালে হলদেটে রঙের ওপর ময়লার দাগ। ছাদের কোণায় মাকড়সার জাল।

পাশের ঘরটা একটু ছোট। একটা মাত্র জানালা। কোণে একটা তাক। ধুলোয় ভর্তি কয়েকটা বই আর পুরনো খবরের কাগজ পড়ে আছে। মেঝেতে একটা মাদুর। দেয়ালে পান খাওয়ার দাগ।

শেষের ঘরটা সবচেয়ে ছোট। বোঝাই যায় রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হত। দেয়ালে কালি পড়ে গেছে। কয়েকটা খালি হাঁড়ি-পাতিল পড়ে আছে কোণায়। জানালার বাইরে একটা নিমগাছের ডাল এসে ঢুকেছে ভেতরে।

বারান্দা পেরিয়ে পেছনে ছোট্ট উঠোন। সেখানে একটা কল, জং ধরা। পাশেই টয়লেট। দরজার কাঠে পোকায় খাওয়া ফুটো। উঠোনের এক কোণে জঙ্গল হয়ে আছে।

এই বাড়িতে জাওয়াদ দু’বছর ছিল!

গুলনূরের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। কী এমন অভিমান, কী এমন আঘাত পেয়েছিল জাওয়াদ? কেন সে রাজপ্রাসাদের বৈভব ছেড়ে এই নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিল?

দুপুরের রোদ্দুর যখন ঝিমিয়ে পড়ছে, তখন জাওয়াদ খাবার নিয়ে এলো। কয়েকটা গরম রুটি, হালকা ভাজা ডিম আর মসলাদার আলুর তরকারি। গুলনূর চোখের পাতার আড়াল থেকে লক্ষ্য করল তার খাওয়ার ভঙ্গি। সেই মানুষটা, যে গতকালও জমিদার বাড়ির বিশাল খানাঘরে বসে দাসীদের ডাকাডাকি করে খাবার পরিবেশন করাচ্ছিল, আজ কী অনায়াসেই না মেঝেতে বসে সামান্য খাবার খাচ্ছে! প্রতিবার যখন চোরা চাহনিতে তাকাল জাওয়াদের দিকে, ততবারই মনে হলো, এ যেন অন্য মানুষ!

বিকেল ঢলে পড়তেই বাজারে নেমে এলো জনতার ঢল। এ পাড়ার বাজার জমে ওঠে বিকেল বেলায়। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে দোকানিরা টানিয়েছে রঙিন ছাতা। জাওয়াদ অদৃশ্য প্রাচীর হয়ে গুলনূরকে ঘিরে রাখল। যেখানে ভিড়ের চাপ বেশি, সেখান থেকে আলতো করে সরিয়ে নিয়ে যায় তাকে। কখনো পিছনে, কখনো পাশে – একটা নিরাপদ আশ্রয়ের মতো। গুলনূরের বুকের পাঁজরে মিষ্টি শিহরন। এমন যত্নময় ছোঁয়া তার জীবনে এই প্রথম….

হঠাৎ একটা আর্তনাদে স্তব্ধ হয়ে গেল চারপাশ। জাওয়াদের শরীর দুলে উঠল! “আহ্!” যন্ত্রণায় কেঁপে উঠল তার কণ্ঠস্বর।

চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্কের ঢেউ। জাওয়াদ যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়তে যাচ্ছিল, গুলনূর ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। তার হাতের তালুতে জাওয়াদের উষ্ণ রক্তের স্পর্শ!

চলবে….

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
Scroll to Top